gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
ভারতফেরত যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ
প্রকাশ : সোমবার, ২ মে , ২০২২, ১২:১৪:৪৯ পিএম
কাগজ সংবাদ:
1651472117.jpg
করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকায় অনেকে যেতে পারেননি ভারতে। সম্প্রতি পর্যটন ভিসা চালু হওয়ায় ভারতে যাতায়াত উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। করোনা সংক্রমণের দুই বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত সাত দিনে সর্বোচ্চ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছেন।এদিকে দেশে ফেরার পথে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন পাসপোর্টযাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, এপারে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারলেও ওপারে ইমিগ্রেশন কাস্টমস ও বিএসএফের হয়রানিতে নাকাল বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।তবে বেনাপোল স্থলবন্দরের কর্তরা বলছেন, দুই দেশের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেউ যাতে এখানে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য সব অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নগরী কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অল্প খরচে স্বল্প সময়ে কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অনায়াসে যাওয়া যায়। ঈদের কেনাকাটা করতে ভারত যাতায়াত কয়েক গুণ বেড়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের।ইমিগ্রেশন তথ্যমতে, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পাঁচ দিনে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ১৬ হাজার ৬৩৫ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে যাতায়াত করেছে। তাদের মধ্যে ভারতে গেছে ১১ হাজার ৬৪৩ জন আর ভারত থেকে ফিরেছে ৪ হাজার ৯৯২ জন। পাঁচ দিনের মধ্যে ২৯ এপ্রিল সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ১৭৮ জন পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে গেছে।রোববার চেকপোস্ট কাস্টমস ইমিগ্রেশনে সরেজমিনে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। দীর্ঘ মানবস্রোত আর ব্যস্ততার হুড়োহুড়ি। কত দ্রুত সময়ে যাওয়া যায়, সবার মাঝে যেন এমন পাল্লা। পা বাড়ালেই বিদেশ। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে এ অবস্থা যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। তাতে ঝুঁকি ঝামেলা, দুর্ভোগ কীই-বা যায় আসে। ইমিগ্রেশন থেকে দীর্ঘ লাইন প্রায় ২৫০ গজ বাইরে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে দেখা গেছে।তবে যাত্রীদের জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সেবার নামে একটি যাত্রী টার্মিনাল করলেও সেখানে কোনো সেবার বালাই নেই বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। আবার সেই টার্মিনালের সেবার নামে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫০ টাকা টার্মিনাল চার্জও আদায় করছে। আর ভ্রমণ-কর বাবদ সরকারকে দিতে হচ্ছে পাসপোর্ট প্রতি ৫০০ টাকা।কলকাতা ফেরত যুবক যশোরের চৌগাছার শামিম হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা পৌঁছে অল্প কিছু কেনাকাটা করেছি। রোববার সকালে ফিরে এলাম। তবে ভারত থেকে ফেরা যাত্রীদের কাছ থেকে জানা গেছে, ই-টোকেন কিংবা ভিসা ব্যবস্থাপনা ভারত সরকার আগের তুলনায় সহজলভ্য করলেও সীমান্তের ওপারেই রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। সেই সঙ্গে ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্টে রয়েছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বিএসএফের চরম দুর্ব্যবহার। ভারত ঘুরে আসা অনেক বাংলাদেশি সেখানে দুর্ব্যবহার আর অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছে।কলকাতা থেকে আসা নড়াইলের সুবোধ, আনন্দ আর নন্দিতা ঘোষ অভিযোগ করেন, ভারতের অংশে ইমিগ্রেশন কাস্টমস ও বিএসএফের অনিয়মে কেউ প্রতিবাদ করলে কিংবা কোনো ব্যাপারে প্রশ্ন ছুড়লে তার পাসপোর্ট আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়া হয়। বয়স্ক মানুষও এ থেকে রেহাই পান না। কেউ কোনো প্রশ্ন না বুঝে আবার জিজ্ঞেস করলেও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়।তারা আরও বলেন, বাংলাদেশিদের ভারতে যাওয়া এবং কেনাকাটা করায় দেশটি হাজার কোটি টাকা আয় করছে। অথচ এ দেশের মানুষ সে দেশে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় চরম দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে দালাল চক্র অনেক যাত্রীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ঘুষ আদায় করছে বলে জানায় অনেকে।মুন্সিগঞ্জের আসলাম হোসেন বলেন, বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস থেকে বের হওয়ার পর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে বিজিবি সদস্যরা আমার প্রতিটি ব্যাগ খুলে তন্নতন্ন করে চেক করেছে। প্রত্যেক যাত্রীর ব্যাগ তারা চেক করছে। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিজিবি সদস্যরা আরও একবার চেক করেছে। তারপর কাস্টমস চেক করেছে। একই জায়গায় তিনবার চেক করা আমাদের জন্য হয়রানি। তিনি আরও বলেন, ট্যুরিস্ট ভিসায় কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন ভারত যাচ্ছে। তবে রোগীদের জন্য আলাদা একটি লাইন করার পরামর্শ দেন তিনি।এদিকে ঈদের কেনাকাটায় হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে ভারতে। আর দেশের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত উঠেছে বলে অভিযোগ। বেনাপোলসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের ভিসা-ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক সহজলভ্য হওয়ায় ঈদের সময় অনেকে কেনাকাটা করতে যায় ভারতে। পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা শেষে দেশে ফিরছে তারা।বেনাপোলের ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। সে কারণে ভারতে গিয়েছিলাম পরিবারের সবার জন্য কিছু কেনাকেটা করতে। কেনাকাটা করে দেশে ফিরছি।বেনাপোল স্থলবন্দর উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, চলতি মাসে বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত বেড়েছে। তাদের বেশির ভাগই ঈদের শপিং করে ফিরছে। এপ্রিলে ভারতীয় হাইকমিশন পর্যটন ভিসা চালু করায় আড়াই হাজার পাসপোর্টযাত্রী প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করছে। তা ছাড়া ঈদের ছুটিতে ভারতে ভ্রমণের আগ্রহ থাকে অনেক ভ্রমণপিপাসুর। ফলে এই সময়ে চেকপোস্টে বাড়তি চাপ বেড়েছে।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাত্রীরা যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে পারে, তাই যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ায় আমাদের কাউন্টারের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওপারে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভোগান্তি হলে বিষয়টি নিয়ে তাদের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।

আরও খবর

🔝