gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
এসএসসির ফরমপূরণ করা হয়নি হাজারো পরীক্ষার্থীর

❒ প্রধান শিক্ষকদের ‘খাই’ মেটাতে পারেননি অসংখ্য অভিভাবক, ঈদের পর আরেকবার সুযোগ

প্রকাশ : শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল , ২০২২, ০১:৫০:১৪ এ এম
এম. আইউব:
1651175478.jpg
এসএসসির ফরমপূরণ অর্থ আদায়ের উত্তম সময় অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকের কাছে। ধান্ধাবাজ প্রধান শিক্ষকদের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েন হাজার হাজার অভিভাবক। প্রধান শিক্ষকরা সারাবছরের পাওনা কড়াই-গন্ডায় উসুল করেন ফরমপূরণের সময়। তারা এ সময় বোর্ড ফি, কেন্দ্র ফি, সারাবছরের বেতনসহ নানাখাতে কয়েক হাজার টাকার ফর্দ ধরিয়ে দেন পরীক্ষার্থীদের হাতে। একসাথে এতবেশি টাকা দিতে পারেন না অনেক দরিদ্র অভিভাবক। আর এই কারণে ফরমপূরণে গড়িমসি করেন প্রধান শিক্ষকরা। এক পর্যায়ে ফরমপূরণের সময় চলে যায়। প্রতি বছরের চিত্র এটি। এবারো সেই একই ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ এপ্রিল ফরমপূরণের সময় শেষ হলেও যশোর শিক্ষাবোর্ডে আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অসংখ্য পরীক্ষার্থী ফরমপূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ফরমপূরণ করতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে এসব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। প্রধান শিক্ষকদের এ ধরনের জুলুমে বিরক্ত-ক্ষুব্ধ শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা বিভাগের অনেক কর্মকর্তা। তারা শিক্ষকদের এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব পরীক্ষার্থী নির্ধারিত তারিখে ফরমপূরণ করতে পারেনি তাদের জন্য ঈদের পর আরেকটি সুযোগ দেয়া হতে পারে। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরমপূরণের ফি নির্ধারণ করে দেয় যশোর শিক্ষাবোর্ড। বোর্ড নির্ধারিত ফি অনুযায়ী ফরমপূরণ বাবদ বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৬শ’ ১৫, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৪শ’ ৯৫ ও মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৪শ’ ৯৫ টাকা নেয়ার নির্দেশনা ছিল। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে বোর্ড ফি ১১শ’ ৭৫ ও কেন্দ্র ফি ৪শ’ ৪০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে বোর্ড ফি ১ হাজার ৮৫ ও কেন্দ্র ফি ৪শ’ ১০ এবং মানবিক বিভাগে বোর্ড ফি ১ হাজার ৮৫ ও কেন্দ্র ফি ৪শ’ ১০ টাকা। পাশাপাশি নবম ও দশম শ্রেণির ২৪ মাসের বেতন ও সেশন চার্জ নেয়ার অনুমতি দেয় শিক্ষাবোর্ড। আর এটিই কাজে লাগান অধিকাংশ প্রধান শিক্ষক। সারাবছর বেতন যাই নেন না কেন ফরমপূরণের সময় একটি বক্তব্য বেতন বাকি ছিল তাই নেয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের প্রশ্ন সারাবছর বেতন না নিয়ে ফরমপূরণের সময় একসাথে চাপে ফেলা হয় কেন?শিক্ষাবোর্ডের একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফরমপূরণে যেসব প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন। তার জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রধান শিক্ষকরা ২৪ মাসের বেতন নেয়ার কথা বলে পার পেয়ে যান। পরীক্ষার্থীরা যে বেতন পরিশোধ করে তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনা। এ কারণে প্রধান শিক্ষকদের ধরা যায় না।পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার ফরমপূরণ করতে পারেনি এমন অনেক পরীক্ষার্থী তাকে ফোন করে প্রধান শিক্ষকদের জুলুমের কথা জানিয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় তাদের ফরমপূরণ করেননি বলে জানিয়েছে তারা। এ বছর নির্বাচনী পরীক্ষার পরিবর্তে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যা শুরু হবে আগামী ১৯ মে থেকে। এই অবস্থায় ফরমপূরণে ব্যর্থ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তায় সময় পার হচ্ছে। যদিও আন্তঃশিক্ষাবোর্ড ফরমপূরণের জন্য দ্বিতীয় দফায় সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঈদের পর এই সময় জানানো হবে। ওইসময় বিলম্ব ফি ১শ’ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে ফরমপূরণ করা যাবে।ফরমপূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি কয়রা উপজেলা উত্তর শাখার কোষাধ্যক্ষ তরুণ কান্তি মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সমিতির আওতাধীন কোনো স্কুল বোর্ড নির্ধারিত ফির বেশি গ্রহণ করেনি। বরং বোর্ড নির্ধারিত ফি যা হয় তার চেয়ে অনেক কম গ্রহণ করেছে। মূলত ছুটির মধ্যে দিন থাকায় অনেকেই ফরমপূরণ করতে পারেনি। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে সেটি শিক্ষক সূলভ আচরণ না। এটি গর্হিত অপরাধ। তার সংগঠনের কোনো সদস্য স্কুলও যদি এমন আচরণ করে থাকে তাহলে তিনি তার বিরুদ্ধে। কোভিডকালীন শিক্ষাবোর্ড যে ফি নির্ধারণ করেছে তার সাথে জরুরি ফির বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ নেয়া সমীচিন না।এসব বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্রের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকদের গড়িমসির কারণে অনেক পরীক্ষার্থী ফরমপূরণ করতে পারেনি। তাদের কথা চিন্তা করে ঈদের পর আরেকবার সুযোগ দেয়া হতে পারে।   

আরও খবর

🔝