gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
উপহারের ঘরে বসে প্রধানমন্ত্রীর জন্য রহিমার নকশি কাঁথা সেলাই
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২২, ০৭:৪৯:২১ পিএম
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি::
1650980989.jpg
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ঘর পাওয়া উপকারভোগীদের একজন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রহিমা আক্তার। ঘর পেয়ে সাবলম্বী হওয়া এক সময়ের গৃহহীন রহিমা আক্তার খুশি হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দুটি নকশি কাঁথা সেলাই করেছেন।আসন্ন ঈদের আগে তৃতীয় ধাপে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়েছে আরও ৩২ হাজার ৯০৪ গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার।মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁওয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন রহিমা আক্তার। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘কেন আঁচোন অঁনে? (কেমন আছেন আপনি)। আপনাকে সরাসরি দেখে, আপনারে সরাসরি চাইয়ে কথা বলার ভাষা অ্যাঁর মুখে দি ন আইয়ে। অঁনেরে দেখে যে, কত খুঁশি লাগের।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমিও খুশি। ’রহিমা বলেন, ‘অ্যাঁই চাইরগো মাইয়া, চাইরগো মাইয়া লইয়ে অ্যাঁই এতদিন ভাড়া বাসাত ছিলাম। অনেক বছর ভাড়া বাসত থাঁয়নের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থন অ্যাঁই একখান বিল্ডিং পাই। ’আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে পাওয়া নিজের ঘরটিকে ফাইভ স্টার হোটেল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে সমুদ্র। বিল্ডিংটা দেখলে মনে হয়, ফাইভ স্টার হোটেলের মতো। আমি মনে করি আমার বিল্ডিংটা ফাইভ স্টার হোটেল। ’প্রধানমন্ত্রীর জন্য নিজে দুটো নকশি কাঁথা সেলাই করেছেন জানিয়ে রহিমা বলেন, ‘আপনার দেওয়া ঘরে বসবাস করে দুইটা কাঁথা সেলাই করেছি। আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই এই কাঁথাগুলো নিতে হবে। আমার এর থেকে মূল্যবান আর কিছু দেওয়ার নাই। এই দুটি কাঁথা সেলাই করছি। আপনি নিবেন। ’এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে বলেন, ‘আচ্ছা, নিশ্চয়ই’।রহিমা আক্তার জানান তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত অন্য বাচ্চাদের আরবি পড়ান এবং তার মেয়ে বাংলা, ইংরেজি ও অংক প্রাইভেট পড়ায়।নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে রহিমা বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমাদের ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ইনকাম হয়। এই আয় দিয়ে একটি ফ্রিজ কিনছি। প্রতিদিন আপনাকে দেখতে পারি তাই একটা টিভি নিয়েছি। একটা খাঁট নিয়েছি। ’আরেক উপকারভোগী ইয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি একদম নিরাশ্রয় ছিলাম। আমার মা-বাবাও আশ্রয় দিতে পারে নাই। অ্যাঁর মতো জেলে মানুষকে টোঁয়ায়ে (খুঁজে) একটা ঘর দিছেন। অনেক কৃতজ্ঞ। ’দুই শতক জমিসহ ঘর পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার বিবেক অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আমারে ২০ লাখ টাকার মালিক বানায়ে দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি। ’ প্রধানমন্ত্রীকে আনোয়ারায় আমন্ত্রণ জানান ইয়ার মোহাম্মদ।চট্টগ্রাম ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ীর উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।একযোগে সারাদেশের উপকারভোগীদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।তৃতীয় ধাপে এসব ঘর প্রদানের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি পরিবার। তৃতীয় ধাপের আরও ৩২ হাজার ৭৭০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে।আশ্রয়ণের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে তৃতীয় ধাপের ঘরগুলো অনেক বেশি টেকসই। তৃতীয় ধাপে একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। তৃতীয় ধাপের ঘরগুলোতে আরসিসি পিলার, গ্রেড ভিম, টানা লিংকটারসহ বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়।ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২২ সালে মার্চ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭ হাজার ২৪৪ ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া ভাসমান বিভিন্ন জনগোষ্ঠীও রয়েছে।

আরও খবর

🔝