gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ঈদের আগেই ওদের ঈদ !

❒ কাল যশোরের ৩১৮ ভূমিহীন গৃহহীনকে ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : সোমবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২২, ১২:০১:৪০ এ এম
এস এম আরিফ:
1650823373.jpg
এবারের ঈদ অন্য রকম আবহ তৈরি করেছে যশোরে তিনশ’ ১৮ টি পরিবারে। কিছুদিন আগেও যাদের নিজের জমি জিরেত বলতে কিছুই ছিল না, অন্যের দয়ায় চলতে হতো, জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনোরকম মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল, তারাই এবার ঈদ করবেন নিজের পাকা ঘরে। তাদের জীবনের এই ঈদ সব প্রাপ্তিকে ছাপিয়ে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি মানবিক উদ্যোগ। যশোরের আট উপজেলার তিনশ’ ১৮টি পরিবারে এখন শুধু সেই স্বপ্নক্ষণ গণনার পালা। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদ উপহার হিসেবে জমির দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করবেন। দেশের প্রায় ৩৩ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সাথে যশোরের তিন শতাধিক পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে এসব পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে দু’ শতক জমিসহ নতুন ঘর। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রবেশদ্বার যশোর। প্রথম শত্রুমুক্ত জেলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে আশ্রয়ণ ৭১ প্রকল্প। যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের গোপালপুর গেট সংলগ্ন সাহাবাটি মৌজায় এক একর ৭৮ শতক জমিতে আশ্রয়ণ ৭১ প্রকল্পে ঘর পাচ্ছে ৬৯ টি পরিবার। পরবর্তীতে আরও দু’টি ঘর নির্মাণ করে এই প্রকল্পে মোট ঘর হবে ৭১টি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে এই প্রকল্পের। হানাদার বাহিনীর মতো এই প্রকল্পের জমিও ছিল দখলদারদের কবলে। সদর উপজেলা প্রশাসন তা উদ্ধার করে তাতে আশ্রয়ণ ৭১ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। এখন তা হস্তান্তরের অপেক্ষায়। উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে কে কোন ঘরের মালিক হচ্ছেন। দু’শতক জমির দলিল, নামজারির খতিয়ানসহ সুদৃশ্য রঙিন টিনের ছাউনিযুক্ত দু’ কক্ষ বিশিষ্ট থাকার ঘর, রান্নাঘর, টয়লেট ও ইউটিলিটি স্পেসসহ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই উপহারে আপ্লুত যশোর সদর উপজেলার চাউলিয়া গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব নারী তহুরন বেগম। তার মতোই আবেগে ভাষাহীন রজনী বেগম, আঞ্জুয়ারা, হাসি বেগমসহ অন্যরাও। তারা সবাই আশ্রয়ণ ৭১ এর সুফলভোগী। যশোর জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, তৃতীয় ধাপে যশোর জেলায় মোট তিনশ’ ১৮টি ঘর বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮১, বাঘারপাড়ায় পাঁচ, অভয়নগরে ২৮, মণিরামপুরে ৪৮, কেশবপুরে ৬১, ঝিকরগাছায় ৪১, চৌগাছায় ৪৮ ও শার্শায় ছয়টি ঘর হস্তান্তর করা হবে। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে জেলার আট উপজেলায় এক হাজার একশ’ ৮১টি পরিবারের মধ্যে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেছে যশোর জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে চারশ’ ৫৫টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচটি মোট চারশ’ ৬০টি ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন বলেন, আশ্রয়ণ ৭১ এর জন্য নির্ধারিত স্থানটি গ্রোথ সেন্টারের নিকটবর্তী। যেখানে পুনর্বাসিত পরিবারগুলো স্থায়ী আবাসনের পাশাপাশি সকল নাগরিক সুবিধা হাতের কাছে পাবেন। এই জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে ছিল প্রভাবশালীদের দখলে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানটি দখলদারদের কাছ থেকে অবমুক্ত করা হয়। তারপর উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটি গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করে। প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সাথে যারা ঘর পাচ্ছেন সেই সব পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থেকে প্রাক্কলন ও ডিজাইন অনুযায়ী গৃহ নির্মাণে তদারকি ও গুণগত মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন।চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি যশোরে আশ্রয়ন প্রকল্প তদারকি করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। ওইসময় তার সাথে ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোহসীন, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সুবাস চন্দ্র সাহা ও জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে মোট ৬৫ হাজার ৪শ’ ৭৪টি পরিবারের জন্য ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩২ হাজার ৯শ’ চারটি ঘর প্রস্তুত হয়ে গেছে। এগুলোই ঈদ উপহার হিসেবে তুলে দেয়া হচ্ছে। মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রায় ৯ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার।

আরও খবর

🔝