প্রকাশ : রবিবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২২, ১২:৩৭:৫৭ এ এম
খরিপ ১ মৌসুমে ২২ এপ্রিল সন্ধ্যার ঝড়-বৃষ্টিতে যশোরাঞ্চলে কোনো ক্ষতি হয়নি। জেলার ৮ উপজেলায় গড়ে ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টি ক্ষতির পরিবর্তে বয়ে এনেছে কৃষকের সৌভাগ্য। এই বৃষ্টি চলমান মৌসুমে ধান পাট তীল সবজীসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে কৃষিবিদরা দাবি করেছেন। শুক্রবারের এই বৃষ্টির কারণেই চলমান মৌসুমে উৎপাদনের টার্গেট ছাড়িয়ে বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে বলেও দাবি তাদের। ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা রাতের বৃষ্টি ঝড়ের পর ২৩ এপ্রিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে জরীপ চালিয়ে যশোর জেলায় এই ইতিবাচক তথ্য পেয়েছেন কৃষি কর্মকর্তাগণ।যশোর কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, কালবৈশাখী না হলেও চলমান বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টি ও ঝড় ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় শুরু হয়। শুধু ঝিকরগাছা উপজেলা বাদে জেলার ৭ উপজেলায় কমবেশি এর প্রভাব দেখা যায়। সময় ভেদে ৮ উপেজেলার বিভিন্ন সময়ে এই ঝড় ও বৃষ্টি হয়। তবে ঝড় বৃষ্টির গড় স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট। আট উপজেলা কৃষি অফিসের বৃষ্টিপাত পরিমাপ যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্যে কৃষি অধিদপ্তর যশোরের উপ পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, যশোর সদর উপজেলায় বৃষ্টির শুরু থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ১২ মিলিমিটার, শার্শায় ১ মিলিমিটার, চৌগাছায় ৬ মিলিমিটার, অভয়নগরে সব চেয়ে বেশি ১৫ মিলিমিটার, বাঘারপাড়ায় ৭ মিলিমিটার, মণিরামপুরে ৮ মিলিমিটার ও কেশবপুরে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। জেলার গড় বৃষ্টিúাত হয়েছে ৮ মিলিমিটার। ২৩ এপ্রিল সকালে কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠ পরিদর্শন করে ফসলের কোনো ক্ষতি দেখতে পাননি। কৃষকরাও কোনো অভিযোগ করেননি। বরং যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা খুবই দরকার ছিল। বিগত মাস খানেক প্রচন্ড গরম ও তাপদাহ ছিলো, ফসলের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন ছিলো। সেই পানিই সরবরাহ হয়েছে এই বৃষ্টিপাতে। কৃষিবিভাগ সূত্রে তথ্য মিলেছে, চলমান খরিপ মৌসুম ১ এ (২০২১ -২২ অর্থ বছর) জেলায় বোরো ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫শ’৫ হেক্টর, আম চাষ হয়েছে ৪ হাজার ১শ’৩৭ হেক্টর বাগানে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় আম চাষ হয়েছে ৫শ’ হেক্টর বাগানে। জেলায় লিচু চাষ হয়েছে ৬শ’৭০ হেক্টর বাগানে। এরমধ্যে শুধু যশোর সদরে চাষ হয়েছে ২শ’৭৫ হেক্টর বাগানে। চলমান মৌসুমে জেলায় সবজী চাষ চলছে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৬শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে। সবজীর মধ্যে রয়েছে লাল শাক, সবুজ শাক, পটল, উচ্ছে, বেগুন, ঝিঙে, কচু, লাউ, উশি, ডাটা, কুমড়া, ঢেড়সসহ চলতি মৌসুমের সব সবজী। পাট চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৮শ’২০ হেক্টর জমিতে। তিল চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩শ’ হেক্টরে ও মুগ ডাল চাষ হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ পরিচালক জেলা কৃষি ট্রেনিং কর্মকর্তা দিপঙ্কর দাস গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, ২২ এপ্রিল সন্ধ্যার ঝড়-বৃষ্টির পরপরই মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়েছে, জরীপ করা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত সব ফসলের জন্য এই বৃষ্টি খুবই কাজে এসেছে। ক্ষতির কোনো খবর নেই। কিছু আম ঝরতে পারে, সেগুলো গরমে বোটা শুকিয়ে যাওয়াগুলো। ওটা স্বাভাবিক। জেলার কৃষির জন্য এই বৃষ্টিপাত ভাল ফসলের সম্ভাবনা বয়ে আনবে। টার্গেট পূরণ হয়ে বাম্পার ফলন হতে পারে। কৃষকদের দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। যারা যে চাষ করছেন তাতে এই বৃষ্টি সৌভাগ্য স্বরুপ। যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাজ্জাদ হোসেন গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ে তিনিসহ তার অফিসারগণ ২৩ এপ্রিল মাঠে নেমে খোঁজ খবর নিয়েছেন। সবস্থানেই এই বৃষ্টিতে খুশির বার্তা বইছে। ভাল ফলনে এই বৃষ্টি খুবই উপযোগী হয়েছে। সদর উপজেলায় ধান, পাট আম লিচু সবজী, তিলসহ যে সব চাষ মাঠে রয়েছে সবগুলোতেই বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। যা ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা রাত থেকে হয়েছে। মাস খানেক ধরে যে তাপদাহ ও খরা চলছে তাতে মাটি শুকিয়ে ছিল। এই বৃষ্টি তার কিছুটা হলেও পূরণ করেছে। কাজেই শঙ্কা নয়, সম্ভাবনা এসেছে চলমান মৌসুমে। এই বৃষ্টির কারণেই ভাল ফসল পাবে যশোরের কৃষকগণ।