gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
আজ বাঙালীর উৎসব
প্রকাশ : শনিবার, ২৬ মার্চ , ২০২২, ০২:৩৫:৪৩ এ এম
আসাদ আসাদুজ্জামান:
1648240619.jpg
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল কালো রাতে রক্ত পিপাসু হায়েনার দল যে রক্ত গঙ্গা বইয়েছিল, যে গণহত্যা তারা শুরু করেছিল, তার জবাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নিতে ভুল কিংবা দেরি করেননি। ২৫ মার্চের মধ্যরাতে, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আজ সেই দিন। আজ বাংলাদেশের জন্মদিন। আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। আজ বাঙালী মাত্রই মেতে উঠবে উৎসবে।এবারের উৎসব এসেছে একটু বেশি করেই। কারণ, গতবছর শুরু হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব। জাতিসংঘ দিয়েছে মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি। মিলেছে উন্নয়নশীল দেশের ‘মেডেল’। এক সময় যারা ‘বটম লেস বাস্কেট’ বলে বাঙালীকে উপহাস করেছিল, সেই তারাই অতি অল্প সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে আজ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাঙালীর হাতে আজ উন্নয়নের দলিল। আজ অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ। তাছাড়াও চলতি বছরের জুনে খুলে দেয়া হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এক বিশাল অর্জন বলে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দু’বছর সেইভাবে বাঙালীর উৎসবে মেতে ওঠা হয়নি। এবার সে বিধি নিষেধ নেই। কাজেই বাঙালী মেতে উঠবে উৎসবে, এটাই স্বাভাবিক! আজ ২৬ মার্চ সে উৎসব হয়ে উঠবে আরো সার্বজনীন, এমনটাই আকাঙ্খা সকলের।কিন্তু আজকের দিনেও বলতে হচ্ছে, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে, আর কতোবার ভাসতে হবে রক্ত গঙ্গায়, আর কতোকাল দেখতে হবে খান্ডব দাহন?’ কারণ আজও স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র ও নানা অপতৎপরতা রয়েছে। একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। রয়েছে দেশকে পিছিয়ে নিতে নানা কারসাজি। তবে এখন আর সাধারণ মানুষ ধর্ম বিক্রেতাদের মুখের মধুর মধুর বাণী কিংবা কোন নেতার ‘চাঁদে দেখা যাওয়ার গল্প’ বিশ্বাস করে না। আর তাই ষড়যন্ত্র বাধাগ্রস্থ করতে প্রস্তুত আজকের প্রজন্ম।মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একাত্তরের প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দিবসই রক্তের অক্ষরে লেখা। তারপরও কোনো কোনো তারিখ ত্যাগে, আত্মদানে ও গৌরবের মহিমায় হয়ে ওঠে সমুজ্জ্বল। একটি তারিখ পরিণত হয় সংগ্রামের প্রতীক, শ্রদ্ধা ও বিজয়ের অবিনাশী স্মারকে। এ দিন গুলো এরকম ১মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু, ৩ মার্চ যশোরে পাকিস্তানী বাহিনীর গুলিতে চারুবালা করের মৃত্যু, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান, ২৫ মার্চ ভয়াল কালো রাত, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন, ১১ জুলাই সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠক, ১ আগস্ট দ্যা কনসার্ট ফর বাংলাদেশ, ৩ ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত দিবস ও বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি, ৪-১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশ-বিতর্ক, ১১ ডিসেম্বর যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রথম জনসভা, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পনের মধ্যদিয়ে বাঙালীর চূড়ান্ত বিজয়। একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বজনীন রূপ নিয়েছিল, কোনো কোনো তারিখে তাও প্রতীকায়িত হয়েছে। শোক ও বীরত্বগাঁথায় ঋদ্ধ এ দিনগুলো বাঙালীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কেবল ইতিহাসের সাক্ষ্য নয়, ভবিষ্যতের পথচলায় নিত্যপ্রেরণা হিসেবেও।আজ মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতি সমৃদ্ধ অর্থনীতি দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায়। ১৮ কোটি বাঙালী শুধু উন্নয়নই নয়, বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন-শোষণহীন স্বপ্নের সোনার বাংলা চায়। ব্যক্তি-বিশেষের উন্নয়ন নয়, স্বাধীন বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। যা মহান স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়নে খুব জরুরী।

আরও খবর

🔝