প্রকাশ : শুক্রবার, ২৫ মার্চ , ২০২২, ০৬:১৬:০১ পিএম
আলোচিত ইসলামিক বক্তা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় নির্যাতনের শিকার শিশু শিক্ষার্থীর পরিবাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই শিশুটির বাবাকে দেয়া হুমকির অডিও রেকর্ড গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে পৌঁছিয়েছে। শুক্রবার সকালে শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে রেকর্ডটি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো হয়।ওই রেকর্ডে শোনা যাচ্ছে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর পরিবাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি ও অভিশাপ দিচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ। এ সময় তিনি ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত হওয়ার হুমকি দেন তিনি।এ বিষয়ে জানাতে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠান ভালোবাসি, মানুষের ছেলে ক্ষতি করবো এটা আমরা কামনা করি না। তবে সেই শিক্ষার্থীর বাবাকে কল দিয়েছিলাম। কি বলেছিলাম মনে নাই।পাঠকদের জন্য মোবাইল ফেনে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ও শিশুটির বাবা মেরাজুল ইসলাম রেন্টুর কথপোকথন তুলে ধরা হলো- আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আপনি মেরাজুল ইসলাম রেন্টু বলছেন। রেন্টু : জ্বি ওস্তাদজি।রাজ্জাক বিন ইউসুফ : চিনতে পারছেন। রেন্টু : জ্বি ওস্তাদজি চিনতে পেরেছি।রাজ্জাক বিন ইউসুফ : আমি আব্দুর রাজ্জাক রাজ্জাক বিন ইসসুফ; আমি গত পরশু দিন আপনার সাথে কথা বলার জন্য আব্দুর রহমানের মামাকে দিয়ে খুব চেষ্টা করেছিলাম। ফোনও দিয়েছিলাম। রেন্টু : জ্বি ওস্তাদজি।রাজ্জাক বিন ইসসুফ : আমি একটা মামলার কাগজ দেখতে পাচ্ছি। আমি হাতে নিলাম এটা। রেন্টু : জ্বি ওস্তাদজি।রাজ্জাক বিন ইসসুফ : আমি জাতির ক্ষতি করেছি।রেন্টু : না আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি। আমার সন্তানকে আপনার কাছে শোফে দিয়েছি। এটা তো বুঝতে পারছেন।রাজ্জাক বিন ইসসুফ : মোবারাকাল; আপনার আবেগের কথাটা আপনে বলেন। রেন্টু : না ওস্তাদজি, বলেন আপনি।রাজ্জাক বিন ইসসুফ : আমার কথা হলো আপনি বাপ হয়ে ছেলেটার ক্ষতি করলেন কি? আমার কাছে ভর্তি করে দিয়েছেন আপনার ছেলেকে। আপনি কি শুনছেন? রেন্টু : জ্বি অবশ্যই।রাজ্জাক বিন ইসসুফ : আমি জানতে পারলাম না; মামলার কাগজ আমার হাতে আসলো। আমি আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ একাই প্রতিষ্ঠান চালাই আল-জামি’আহ, আস সালাফিয়া ডাংঙ্গী পাড়া, রুপগঞ্জে। আর আমার ছেলেরা আলহামদুল্লিলাহ, শীর্ষ স্থানীয় ছেলে। এটা জাতির কথা আপানার কথা ও আপনার পরিবারেরও কথা।আমার আব্দুর রহমান আপনার ছেলেকে মেরে ফেলে দিবে এটার হিসাব! যাক আমি ওদিকে বলতে চাইনি। আমি বলতে চেয়েছি, ছেলেটার ক্ষতি করে দিলেন। রেন্টু : ওস্তাদজি আমি।রাজ্জাক বিন ইসসুফ : আমার অসন্তুষ্ট থাকাটায় আপনার ছেলের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ। রেন্টু : জ্বি ওস্তাদজি।আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফ : আপানার ছেলেটাকে হেফাজতের জন্য। এখন হলো এই যে আল্লাহর গজব থেকে আপনার ছেলেটাকে রক্ষা করার জন্য এখন আপনার সহজ পথ, আমার পথ, কোথায় গেলে মামলা উঠে যাবে সেটা বলা, আর আমি যে কষ্ট পাচ্ছি এটা উঠিয়ে ধরা। আব্দুর রাজ্জাক সাহেব এখানে একটা ভুল হয়েছে। আপনি আমার ছেলেকে মাফ করে দেন। আল্লাহ যেন আমার ছেলেটাকে যেন মানুষ করে।আরেকটি অডিও রেকর্ডে শোনা যায়- রেন্টু : একটা শিশুকে কি পরিমাণে মারা হলে সেই শিশুটা বমি করতে পারে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে?রাজ্জাক বিন ইসসুফ : এক বাড়িতেও মানুষ মারা যায়। আপনার ছেলে তো বেঁচে আছে। আব্দুর রহমান তো মারেনি। যারা চুরি করেছে তারা মেরেছে। আপনার ছেলেই চোর। আপনি কোটে কত দিন চলবেন চলেন, আপনি মনে করেন না; আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফের পরিবার ক্ষতিগ্রাস্ত হবে।রেন্টু : ওস্তাদজি আমি আপনার কথা ফেলতে পারি না। আপনি আমার ক্ষতি চাইতে পারেন? আমরা বিচার চাই।রাজ্জাক বিন ইসসুফ : কোর্টে আপনি মামলা করছেন আমাকে জিজ্ঞাসা না করে। আমি প্রতিষ্ঠান চালাই। আপনি কত বড় খারাপ অভিভাবক হিসাব আছে।রেন্টু : ঠিক আছে ওস্তাদজি, আমি খারাপ অভিভাবক, আমি মিথ্যাবাদী।আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফ : শেষ কথা আপনি ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত হোন ।তৃতীয় অডিও রেকর্ডে শোনা যায়- আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফ : আপনি কি এটা প্রতিশোধের জন্য মামলা করেছেন। রেন্টু : না না, আমার ছেলের সাথে অন্যায় হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার চাচ্ছি।আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফ : ন্যায় বিচার কোর্টে নিবেন। রেন্টু : জ্বি ওস্তাদ জ্বি।আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফ : তাহলে তো আপনার সাথে এত কথা বলে হিসাব করতে পারলাম না। ঠিক আছে আল্লাহ আপনার ছেলেকে ধ্বংস করুক। হারিয়ে যাক। আল্লাহ এই ব্যবস্থা করে দিবে। আপনি মামলা চালান।হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের নাতির বিরুদ্ধে টাকা চুরি অভিযোগ করায় নির্যাতনের শিকার হয় রামিম।রামিমের বাবা মেরাজুল ইসলাম রেন্টু জানান, ১৬ মার্চ মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীর টাকা হারানোর ঘটনা ঘটে। এ সময় আব্দুর রহমানের ভাইয়ের ছেলে এবং ওই মাদ্রসার চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে টাকা চুরির অভিযোগ তোলেন রামিম। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে পাইপ দিয়ে বেপরোয়া পেটাতে থাকেন আব্দুর রহমান। এ সময় অন্য ছয় ছাত্রকেও পেটানো হয়।রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।