gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
টাইগারদের ঐতিহাসিক আফ্রিকা জয়
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ , ২০২২, ০১:০৬:৪১ এ এম
আবুল বাসার মুকুল:
1648062438.jpg
এ যেন অন্য এক বাংলাদেশ। ক্রিকেট বিশ্ব দেখলো ভিন্ন আদলে লাল সবুজের পতাকা। টাইগারদের সময়ের অদম্য সাহসিকতায় আলোকিত বাংলাদেশ। অনেক শক্তিশালী দল যা পারেনি, সেটাই করে দেখালো টাইগাররা। ইতিহাস গড়েই জয় করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের ক্রিকেট রূপকথায় যোগ হলো আরেকটি নতুন অধ্যায়। যে অধ্যায় বাংলাদেশকে ভাসাচ্ছে নিদারুণ আনন্দে। সেঞ্চুরিয়ানের সবুজ গালিচায় বাংলাদেশও আনন্দে মাতলো। ড্রেসিংরুম থেকে ওয়েটিং লাউঞ্জে মিরাজ, ইয়াসির, আফিফদের বাধনহারা উল্লাস, আনন্দ নৃত্য মনে করিয়ে দেয় এশিয়ার দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে সিরিজ জয়ের আনন্দ কতোখানি গর্বের।  এ জয়ে গর্বিত গোটা বাঙ্গালি জাতি। সাবাস্ বাংলাদেশ। সাবাস্ টাইগার বাহিনী। অভিনন্দন ক্রিকেট দলকে।  বাংলাদেশের এ জয়ে ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে দাপুটে জয়ের পর শেষ ম্যাচে নয় উইকেটের বড় জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিল তামিম ইকবালের দল। সিরিজ ও ম্যাচজুড়ে দার”ণ ফর্মে থাকা তাসকিন সিরিজসেরা ও ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন।পরিসংখ্যান বলছে, উপমহাদেশের দলগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শ্রীলঙ্কা কখনো জিততে পারেনি, ভারত জিতেছে একবার, পাকিস্তান দু’বার। এদিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশও গর্বিত। সেঞ্চুরিয়নে বুধবার তৃতীয় ওয়ানডেতে তাসকিন আহমেদের দার”ণ বোলিংই বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি উইকেট শিকারের মিছিলে ছিলেন সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম। টাইগারদের এমন দাপুটে বোলিংয়ে মাত্র ১৫৪ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার এর আগে দলীয় সর্বনিম্ন রান ছিল ১৬২, ২০১৫ সালের ১৭ জুন।ইতিহাস সৃষ্টির প্রথমাংশ রাঙিয়ে যায় তাসকিনের পাঁচ উইকেট, দ্বিতীয়াংশ রঙিন তামিমের ৮৭ রানের ঝলমলে ইনিংসে। লিটনের সঙ্গে তামিমের ১২৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতেই বাংলাদেশের জয় নিয়ে সব শঙ্কা উবে গেছে। শেষ পর্যন্ত লিটন আউট হলেও সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে বাকি পথটুকু আনায়াসে পাড়ি দিয়ে নয় উকেটের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। কেশভ মারাহাজের বলে ব্যক্তিগত ৪৮ রানের ফেরেন লিটন দাস। ৫৭ বলে আটটি চারে ইনিংস সাজান লিটন। ওপেনিংয়ে তামিম-লিটন ১২৫ বলে ১২৭ রানের জুটি গড়েন। ব্যাট করতে নেমে ৫২ বলে নয়টি চারে অর্ধশত পূর্ণ করেন তামিম ইকবাল। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫২তম অর্ধশতক।   লিটনের বিদায়ের পর লড়তে থাকা তামিমকে সঙ্গ দেন সাকিব আল হাসান। এ দুই ব্যাটারের ৩৪ বলে ২৯ রানের জুটিতে ভর করে জয়ের বন্দর পৌঁছায় বাংলাদেশ। ৮২ বলে ১৪ চারে ৮৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তামিম ইকবাল। অপরপ্রান্তে থাকা সাকিব দু’টি চারে ২০ বলে ১৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন।এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার মিলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুর” এনে দেন। দু’জনে গড়েছেন ফিফটি ছুঁইছুঁই রানের জুটি। তবে তাদের একজনকে থামিয়ে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ইনিংসের সপ্তম ওভারে এই অফ স্পিনারের বলে লং অফে থাকা মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কুইন্টন ডি কক। আগের ম্যাচেই ব্যাট হাতে ঝড় তোলা প্রোটিয়া ওপেনার আজ থামেন ১২ রান করে। দলীয় ৪৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।মিরাজের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপে আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের ১৩তম ওভারে এই ডানহাতি পেসারের বল তিনে নামা কাইল ভেরেইনার ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। তিনি ফেরেন নয় রানে। ভেরাইনের পর থিতু হয়ে বসা ইয়ানেমান মালানকেও বিদায় করেন তাসকিন। ইনিংসের ১৫তম ওভারে টাইগার পেসারের বাউন্সারে পরাস্ত হয়ে প্রোটিয়া ওপেনার এগিয়ে এসে শট খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। বিদায়ের আগে ৫৬ বলে সাতটি চারে ৩৯ রান করেছেন মালান।মালান বিদায় নেওয়ার পর টেম্বা বাভুমাকে ফেরালেন সাকিব আল হাসান। তিনি করেন দুই রান। দুই ওভার পরেই শরিফুল ইসলামের লাফিয়ে ওঠা বলে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন পাঁচে নামা রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। তার ব্যাট থেকে আসে চার রান। স্কোর বোর্ডে ৮৩ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে ২০ রানে বিদায় করে স্বাগতিকদের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান তাসকিন।  ২৯তম ওভারে আক্রমণে এসে আরও দুই উইকেট তুলে নেন তাসকিন। ওভারের তৃতীয় বলে ডেভিড মিলারকে ১৬ রানে ও কাগিসো রাবাদা ফেরান চার রানে। সেই সঙ্গে ইনিংসে নিজের পঞ্চম উইকেটের দেখা পান তাসকিন। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচটি উইকেট নিলেন তাসকিন। আগের সেরা এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই মেহেদী হাসান মিরাজের ৬১ রানে চার উইকেট। এছাড়া প্রায় ১০ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সফরকারী দলের কোনো পেসার এই প্রথম ওয়ানডেতে পাঁচটি উইকেট পেলেন।  এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে পার্লে ৫৪ রানে পাঁচটি উইকেট পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্ক লাসিথ মালিঙ্গা।  শেষদিকে লুঙ্গি এনগিডিকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন কেশভ মহারাজ। তবে ১৪ বল মোকাবিলায় কোনো রান করার আগেই সাকিবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এনগিডি। মিড অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে ক্যাচটা লুফে নেন বদলি ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত। আর কেশভ ফেরেন ২৮ রানে।বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন পাঁচটি, সাকিব দু’টি, মিরাজ ও শরিফুল নেন একটি করে উইকেট। বাংলাদেশের ক্রিকেট রূপকথায় যোগ হলো আরেকটি নতুন অধ্যায়। যে অধ্যায় বাংলাদেশকে ভাসাচ্ছে নিদারুণ আনন্দে। সেঞ্চুরিয়নের সবুজ গালিচায় বাংলাদেশও আনন্দে মাতলো। ড্রেসিংরুম থেকে ওয়েটিং লাউঞ্জ; মিরাজ, ইয়াসির, আফিফদের বাধনহারা উল্লাস, আনন্দ নৃত্য মনে করিয়ে এশিয়ার দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে সিরিজ জয়ের আনন্দ কতোখানি। যেই কাজটা এখনও পারেনি ১৯৯৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা।

আরও খবর

🔝