gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১১ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
চাঁদা দিয়ে এক বছরেও পাননি ঋণ, আসবাব খুলে নিলেন সদস্যরা
প্রকাশ : বুধবার, ২৩ মার্চ , ২০২২, ০২:৫৯:২৭ পিএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি::
1648025997.jpg
সমাজের অসহায়, দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য গরু কিনতে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। গরু লালনপালন করে এই ঋণ শোধ করা যাবে দুই বছরে। তবে তার আগে সদস্য হতে দিতে হবে ছয় হাজার টাকা। এক বছর ধরে এভাবেই সদস্য সংগ্রহ করছে বাদিয়াখালী দুস্থ মাতা মহিলা সমিতি নামের একটি সংস্থা।চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ১ হাজার ৬০০ সদস্যের কাছ থেকে ৬ হাজার করে প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বাদিয়াখালী দুস্থ মাতা মহিলা সমিতি। কিন্তু সদস্য হিসেবে ভর্তির এক মাসের মধ্যে ঋণের টাকা দেওয়ার শর্ত থাকলেও পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ এক বছর। এ জন্য অফিসের আসবাবপত্র খুলে নিয়ে যান ভুক্তভোগী সদস্যরা।কাগজে-কলমে বাদিয়াখালী দুস্থ মাতা মহিলা সমিতি নামে থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বলছেন, এটি মুক্তি ফাউন্ডেশন নামের সংস্থা। অন্যদিকে অফিসের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল ‘ইকো সোসাইটি’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানার। গত এক বছর ধরে টাকা দেওয়ার কথা বলে ঘোরালেও ঋণের টাকা না দেওয়ায় কয়েক দিন ধরে জেলা শহরের সিসিডিবি মোড়ের অফিসে এসে ঘুরে যাচ্ছেন সদস্যরা।জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য অফিসে এসে ভর্তি ফি দেওয়ার ৬ হাজার করে টাকা ফেরত নিতে আসে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও কর্মীদের আশ্বাসে ফিরে যান তারা। এরপর নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ঋণের বা ভর্তি ফি দেওয়ার টাকা না পেয়ে ২ মার্চ আবারও ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য অফিসে আসেন। এ সময় কাউকে না পেয়ে অফিসের আসবাবপত্র নিয়ে যান ভুক্তভোগী সদস্যরা।কাঁঠাল পাতের ব্যবসা করেন জেলা শহরের চাঁদলাই এলাকার মো. বিশু। তিনি বলেন, সদস্য হিসেবে ভর্তি হওয়ার এক বছর হয়ে গেল। গরু কেনার এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ছয় হাজার টাকা ফি নিয়েছে। এমনকি সদস্য হওয়ার পর কোনো বই বা রশিদ দেয়নি। এখন এসে দেখি অফিস বন্ধ। যে মহিলা আমাদের ভর্তি করেছিল, তাকেও ফোনে পাই না এখন।চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার টিকরামপুর চাকপাড়ার ফাজেলের স্ত্রী রাইহেনা বেগম, চরমোহনপুর এলাকার সাদিকুল ইসলামের স্ত্রী নাসেরা, জহুরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া বেগমসহ আরও অন্তত ১০ থেকে ১২ জন নারী এসে অফিসের সামনে সদস্য ভর্তি ফি ৬ হাজার টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য বসে আছেন। তারা বলেন, আমরা এখন আর ঋণের টাকা চাই না। সদস্য ভর্তি হওয়ার এক মাসের মধ্যে ঋণের এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে বছরজুড়ে ঘোরাচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। ধারদেনা করে টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছি।বটতলাহাট মিরপাড়ার রফিকুল আলমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, গরু কেনার টাকা দিব বলে টাকা নেওয়ার পর গরু পালন বিষয়ে একটা প্রশিক্ষণও করেছি। তিন মাস পরে ঋণ বলে টাকা নিয়েছে। বছর পেরিয়ে গেল। ফোন করলেও অফিসের কাউকে পাই না। প্রতিদিন এসে ঘুরে যাচ্ছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শিয়ালা কলোনীর মাহাবুল ইসলাম বলেন, চার মাস আগে স্ত্রী ও বোনের মিলে ১২ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হিসেবে বাদিয়াখালী দুঃস্থ মাতা মহিলা সমিতিতে ভর্তি হয়েছি। কয়েক দিন ধরে অফিস ঘিরে বসে ছিলাম। পরে দেখি আর কেউ আসে না অফিসে। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে অফিসের চেয়ার-টেবিল, ফ্যান, আলমারি সবকিছু খুলে নিয়ে চলে গেছে সদস্যরা। কয়েক দিন আগে এক কর্মীকে আটক করে সদস্য ভর্তির ফি আদায় করা হয়েছে বলো জানান তিনি।বাদিয়াখালী দুস্থ মাতা মহিলা সমিতির অফিসের নিচতলায় ব্যাটারির দোকান রয়েছে জহুরুল ইসলামের। তিনি বলেন, আমাদের জানামতে প্রতিষ্ঠানটি মুক্তি ফাউন্ডেশন নামে চলত। কিন্তু সাইনবোর্ড ছিল ‘ইকো সোসাইটি’ নামে। গত ২ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে সব সদস্য মিলে সব আসবাবপত্র নিয়ে চলে গেছে। আর অন্য সদস্যরা অফিসের সামনে এসে ঘুরে যাচ্ছে।যে ভবনে অফিস রয়েছে, তার মালিক কয়েস আলী মাস্টার জানান, তারা ৯ মাস ধরে ভাড়া নিয়ে দোতলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখন পর্যন্ত ভাড়া নেওয়ার চুক্তিপত্র হয়নি। এখনো চার মাসের ভাড়া বাকি রয়েছে। ঋণের টাকা না দেওয়ার কারণে গত ২ মার্চ সদস্যরা তালা ভেঙে অফিসের সব আসবাবপত্র নিয়ে চলে গেছে। পরে আমার নিজের একটি তালা দ্বিতীয় তলায় আটকে রেখেছি। এমনকি মূল মালিক আব্দুল খালেক ফোন রিসিভ করে না।বাদিয়াখালী দুস্থ মাতা মহিলা সমিতির মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেন মুকশেদা, শান্তি, ইরানীসহ আরও কয়েকজন। তারা বলেন, এখানে আমরাও অসহায়। এক বছর ধরে টাকা তুলে আমরা মালিক আব্দুল খালেককে দিয়েছি। এরপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, অফিসিয়াল কাজের নাম করে সদস্যদের ঘোরাতে হচ্ছে। মালিক আব্দুল খালেক এখনো ঋণের টাকা দেওয়া হবে বলছে। এদিকে সদস্যরা আমাদের সদস্য ফি বাবদ দেওয়া ৬ হাজার টাকা ফিরিয়ে নিতে ব্যাপক চাপ দিচ্ছে। কর্মীরা যাদের কাছ থেকে নিয়েছে, তাদের নিজের পকেট থেকে টাকা শোধ করতে হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে বাদিয়াখালী দুস্থ মাতা মহিলা সমিতির পরিচালক আব্দুল খালেকের ব্যবহৃত দুটি নম্বরে অন্তত ১৪ বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ ধরেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেনি কেউ। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান বলেন, এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানি না। এমনকি কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। তবে খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

🔝