gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী পর্বত বাগান হতে পারে দক্ষিণ বাংলার পর্যটন কেন্দ্র
প্রকাশ : রবিবার, ২০ মার্চ , ২০২২, ০৬:১৪:৪৬ পিএম
তানমিরা সিদ্দিকা জেবু, মাদারীপুর::
1647778503.jpg
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা অবহেলিত, অযত্নভাবে পড়ে থাকা মাদারীপুর মস্তফাপুরের ঐতিহ্যবাহী পর্বত বাগান হতে পারে দক্ষিণ বাংলার পর্যটন কেন্দ্র।প্রকৃতিপ্রেমী, সৌন্দর্যপিপাসু রাস বিহারী পর্বত মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের বড় বাড্ডা গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। ময়মনসিংহ জমিদারী সেরেস্তার নায়েবের চাকরী শেষে আপন শখেই গড়ে তুলেছিলেন এই বাগান। পরে এই বাগানের নাম লোকমুখে হয়েছিলো পর্বত বাগান।খোজ নিয়ে দেখা যায়, ১৯৩০ সালে রাস বিহারী পর্বত দেশী-বিদেশী প্রায় ৫শ’ জাতের ফল ও ফুলের চারা সংগ্রহ করে প্রায় ২০ একর জমির উপর গড়ে তুলেন এই বাগান। সেই থেকে তার নামানুসারে এ বাগানটি ‘পর্বত বাগান’ নামে পরিচিতি পায়। বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা কুমার নদ বাগানের আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ হিসেবে বাড়তি সৌন্দর্য এনে দেয়। বাগান প্রতিষ্ঠালগ্নে হাজার হাজার নারকেল ও সুপারি গাছ বাগানটিকে ঘিরে রেখেছিল। ছিল আম, জাম, কাঁঠাল, কামরাঙা, আমড়া, কুল, সফেদা, জলপাই, আমলকি, কমলা, জামরুল, তেজপাতা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ফল ও ভেষজ গাছ। বাগানটিকে নয়নাভিরাম করার জন্য ছিল গোলাপ, গন্ধরাজ, টগর, কামিনী, হাসনাহেনা, বকুল, জুঁই, বেলী, জবাসহ দেশী-বিদেশী অসংখ্য ফুলের গাছ। সেই সাথে প্রায় ১২ রকমের গোলাপ গাছ ছিল পর্বত বাগানে। বিচিত্র পাখির কল-কাকলিতে বাগানটি ছিল মুখরিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট বহু দেশী-বিদেশী পর্যটক ও পিকনিক পার্টির আগমন ঘটতো এ বাগানোর শোভা দর্শনের প্রত্যাশায়। শীতকালে বাগান সংলগ্ন পুকুরে আগমন ঘটতো বিচিত্র পাখির। ফলে খুব সহজেই আকৃষ্ট হতো পর্যটক। বাগানের মধ্যে ৬টি শান বাঁধানো পুকুর ও রাসবিহারী পর্বতের বাসভবনটি সবচেয়ে  আকর্ষণীয়। এগুলো এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। অথচ এক সময় বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের মধ্যে আর কোথাও চিত্ত বিনোদনের এবং  পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মত এমন নয়নাভিরাম পরিবেশ দ্বিতীয়টি ছিল না। জানা যায়, তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমা শহরে যে সব উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার আগমন ঘটেছিল তাদের প্রত্যেকেই এসেছিলেন এ বাগানে। গাছপালা ও নানা প্রজাতির পাখির পাশাপাশি এ বাগানে ছিল বিভিন্ন ধরণের জীব-জন্তু। হনুমান, বানরের ছিল অবাধ বিচরণ। নির্ভিঘ্নে তারা ঘুরে বেড়াতো বাগানের এ ডাল থেকে ও ডালে। খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় কিছু রাজাকার ও পাক সেনাদের দ্বারা নির্মমভাবে রাসবিহারী পর্বত নিহত হন। রাজাকার ফকু মাতুব্বর দ্বারা দখল হয়ে যায় তার বাগানবাড়ি। এ মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই বাগানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইজার করে দেয় বাগানের গাছপালা। বাগানের মধ্যে এখনও রাসবিহারী পর্বতের ১৪ কক্ষ বিশিষ্ট দোতলা বাসভবন, ১টি মন্দির এবং বাবা রাজকুমার পর্বত ও মা বিধুমুখী পর্বতের ২টি সমাধিসৌধ ঐতিহ্যের ধারক হয়ে আছে। বাগান ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। এদের কেউ কেউ ক্রয় সূত্রে আবার কেউবা দখল সূত্রে বাড়ি তৈরি করেছেন। আগের মত বাগানটির শোভা না থাকলেও কাছাকাছি জমিদার সুরেশ চন্দ্র পোদ্দারের বাড়ি মিলিয়ে এলাকাটি এখনও আকর্ষণীয়। এ ব্যাপারে মাদারীপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন  ফ্রেন্ডস অভ নেচারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, এ বাগানে অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে, যা রক্ষা করা প্রয়োজন। সরকার ইচ্ছে করলেই দক্ষিণ বাংলার ঐতিহ্য এ বাগানটি হতে পারে বিনোদন কেন্দ্র। মৌসুমে দু’একটি পিকনিক পার্টি দেখা গেলেও পর্যটকদের দেখা যায় না। বাগানটি রক্ষা হলে আবার হয়তো পরিবেশপ্রেমী সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে ঐতিহ্যবাহী পর্বত বাগান।  জেলা পরিবেশ ও বন বিষয়ক কমিটির সদস্য শাহজাহান খান বলেন, বর্তমানে মাদারীপুরে এতো বড় একটি মনোরম বাগান তৈরি করা সম্ভব হবে কিনা তা সবার অজানা। তাই দক্ষিণ বাংলার পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে বাগানটি তৈরি করা সম্ভব। মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈলী দিয়ে তৈরি কুমার নদী ঘেরা পর্বত বাগানের নৌ-এবং জলপথ প্রবেশের সুবিধা রয়েছে। সরকারের উচিত অচিরেই বাগানটিকে দক্ষিণ বাংলার পর্যটক কেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাগানটি রক্ষা করা। এছাড়াও মাদারীপুরবাসীর দাবী শুধু সরকারের নয় বাগান রক্ষার জন্য  সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ মাদারীপুরের সর্বত্র মানুষের এগিয়ে আসা উচিত।

আরও খবর

🔝