gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
তরুণীকে নির্যাতনে আটকের পর মেম্বার ছাড়া পাওয়ার নেপথ্যে
প্রকাশ : রবিবার, ২০ মার্চ , ২০২২, ১২:৪১:০৫ এ এম
শিমুল ভূইয়া:
1647715309.jpg
যশোরের চুড়ামনকাটি এলাকায় ইউপি মেম্বরের হাতে তরুণ তরুণীর অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় আটক হয়েও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ইউপি মেম্বর আনিচুর। শুধু তিনি নন সাথে তার দুই সহযোগী আইয়ুব আলী ও আব্দুল আলীমও জামিন পেয়েছেন। কারাগারে গেছেন শুধুমাত্র সহযোগী ভুট্টো। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দুর্বল ধারা প্রয়োগের কারণে আসামীরা এ সুযোগ পেয়েছে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে তরুণ-তরুণীকে বেধড়ক মারপিট করে স্থানীয় মেম্বর আনিচুর ওতার কয়েকজন সহযোগী। যার একটি ভিডিও ফুটেজ ১৮ মার্চ ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় তাদেরকে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। চিৎকার করে তরুনী বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। তারপরেও ক্ষান্ত হয়নি মেম্বর সহ অন্যরা। এক পর্যায় জুতা পেটা করতেও দেখা যায়। চুল কেটে দেয়ার চেষ্টাও চালানো হয়। এদিকে ভিডিও ভাইরালের পরই আলোড়ন শুরু হয়।  দোষীদের আটকের দাবিতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ডিবি পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযানে নামে। আটক করা হয় চারজনকেই। পরে থানায় মামলা হয় আসামিদের নামে। পুলিশ চারআসামিকে শনিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করে। সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম তিন আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। অপর জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন যশোর সদর কোর্ট জিআরও মুজিবুর রহমান ও হাজতখানা ইনচার্জ এটিএসআই সন্তোষ। এদিকে সন্ধ্যায় জামিন হয়ে যাওয়াটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। অনেকে বিস্বয় প্রকাশও করেছেন। হতাশ হয়েছেন সবাই। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই সালাউদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি চাঞ্চল্যকর। তিনি সব আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরমাঝে রাতেই লোকমারফতে জানতে পারেন ওই তিনজনের জামিন হয়ে গেছে। জামিন হওয়ায় মামলাটির তদন্তে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচজন সিনিয়র আইনজীবীর সাথে কথা বললে তারা জানান, মামলাটিতে মোট ছয়টি ধারা রয়েছে তার মধ্যে  ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩৫৪/৫০৬ ধারা জামিন যোগ্য। অর্থাৎ গতিরোধ করে মারপিট, সাধারণ আঘাত, শ্লীলতাহানী, হুমকি ধামকির বিষয়ে জামিন দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে। তবে  ৩৭৯ ধারায় অর্থাৎ মেয়ের কাছে থাকা ১০ হাজার টাকার  মোবাইল ফোন, নগদ পনেরশ টাকা ও ৫৫ হাজার টাকার গহনা চুরির অভিযোগ জামিন অযোগ্য। এজাহারে ভুট্টোর বিরুদ্ধে ৩৭৯ ধারার অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ভুট্টো বাদে সবাই জামিন পেয়েছেন। আইনজীবীরা আরও জানান যেহেতু বিষয়টি হৃদয় বিদারক ও স্পর্শ কাতর। এছাড়া বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাৎক্ষনিক আসামি আটকও হয়েছে সেক্ষেত্রে জামিন না হলে বাদী পক্ষ উপকৃত হত। অন্যদিকে আইনের প্রতি আস্থার জায়গাটা বৃদ্ধি পেত।  এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, মামলাটিতে শ্লীলতাহানীর ধারা দেয়া হয়েছে ৩৫৪।  কিন্তু  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শ্লীলতাহানীর জন্যে ১০ ধারা বলবত রয়েছে যা জামিন অযোগ্য। মামলা রেকর্ড করার সময় যদি  ৩৫৪ ধারা না দিয়ে  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা করা হতো তাহলে আসামিরা কেউই জামিন পেতেন না। সবাই কারাগারে যেতেন। এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলামের মোবাইল ফোনে গতকাল রাতে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। অপরদিকে অভিযোগ উঠেছে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই মেম্বরসহ তিনসহযোগী এলাকায় যেয়ে নানা ধরনের হুংকার ছুড়ছেন। তারবিরুদ্ধে কে কে কথা বলেছে তা খতিয়ে দেখে তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। মেম্বর আনিচুরের ভয়ে কেউ কেউ আত্মগোপনে চলেগেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।

আরও খবর

🔝