gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
পুলিশের হাতমাইকে করলেন বক্তৃতা

❒ রিমাণ্ডের আসামিরা থানায় আসলেন প্রাইভেটকারে

প্রকাশ : বুধবার, ৯ মার্চ , ২০২২, ০৯:৩১:৪৭ পিএম
শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি ::
1646839943.jpg
ঝিনাইদহের শৈলকুপার একটি হত্যা মামলার পাঁচজন আসামিকে আদালত পুলিশি রিমান্ডে দেয়ায় তাদের থানায় নিয়ে আসা হলো প্রাইভেটকারে। এর আগে থানা অভ্যন্তরে জড়ো হওয়া আসামিদের বিপুল সংখ্যক সমর্থক জড়ো হয়ে দিতে থাকে মুর্হুমুর্হু স্লোগান। থানায় আসার পর প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল পুলিশের হাতমাইকে উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাও করেন। এসময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রিমান্ডের আসামিদের এভাবে ব্যক্তিগত বাহনে চড়িয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে থানায় নিয়ে আসা এবং পুলিশের হাতমাইকে বক্তৃতা করার বিয়টি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। মামলার বাদী পুলিশের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সুবিচার না পাওয়ার আশংকা ব্যক্ত করেছেন।  শফিকুল ইসলাম শিমুল সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। তার গ্রামের বাড়ি বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামে। ঘটনার সময় তার সাথে আরও চারজন রিমান্ডের আসামি ছিলেন।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সদ্যসমাপ্ত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগে নানা বিরোধ দেখা দিয়েছে। এসবের জেরে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি প্রকাশ্যে পিঁয়াজের খেতে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় কল্লোল খন্দকার নামে এক যুবককে। এ ঘটনায় নিহতের ছোটভাই মিল্টন খন্দকার ১২ জানুয়ারি ৮২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা (মামলা নম্বর ৩) দায়ের করেন। মামলায় নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলকে করা হয় হুকুমের আসামি। হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রথম থেকেই আসামিদের আটকে পুলিশের অনিহাসহ নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে আসা হচ্ছে বাদীর পরিবারের পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে সাংবাদিক সম্মেলনসহ তারা থানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। পুলিশ ওই মামলায় আফান ও সজিব নামে দু’আসামিকে আটক করে। মামলার অপর পাঁচ আসামি শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাসির বিশ^াস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া, আখির মুন্সি গত ২ মার্চ বুধবার আত্মসমর্পণ করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার উপ-পরিদর্শক তৌফিক আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চান। ৮ মার্চ মঙ্গলবার আদালত তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ আদালত থেকে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় শৈলকুপা থানায়।স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরপরই রিমান্ডের আসামিদের পুলিশের গাড়িতে না এনে ব্যক্তিগত গাড়ি বহরের তিনটিতে করে থানায় আনা হয়। সংবর্ধনার স্টাইলে এসব আসামির সমর্থক-কর্মীরা মোটরসাইকেলে ছিলেন বহরের আগে। এরও আগে থেকে থানার আশপাশে ও ভেতরে ভিড় জমান আরও বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক। সমর্থকেরা থানা অভ্যন্তরে সেøাগানও দেন। এসময় শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা থানায় অবস্থান করছিলেন। আসামিদের থানায় নিয়ে আসার পর ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেন তার হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডের আসামি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। তিনি পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।রিমান্ডের আসামিদের এমন সুবিধা দেয়ায় চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা নজিরবিহীন। আমরা ন্যায় বিচার পাবো বলে মনে করছি না’। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতার কথাও জানিয়েছেন তিনি।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌফিক জানান, আসামিদের কারও ব্যক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি, গাড়িগুলো ভাড়া করা। বাকি বিষয় ওসি তদন্ত এবং থানায় সে সময় অবস্থান করা পুলিশ সদস্যরা বলতে পারবেন।শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেন জানান, ‘পরিস্থিতি শান্ত করতে আসামির হাতে মাইক তুলে দেয়া হয়েছে’।ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পিপি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘রিমান্ডের কোন আসামির সাথে কখনো কখনো স্বজনরা দেখা করতে পারেন, তবে অন্য কারও দেখা করার বিধান নেই’।শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রিমান্ডের কোন আসামি এভাবে বক্তব্য দিতে পারে না’। ঘটনার সময় তিনি থানায় ছিলেন না জানিয়ে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

আরও খবর

🔝