gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
গা ঢাকা দিয়েছে কোটি টাকা হাতানো উদয়ন চক্রের সবাই

❒ প্রতারণার শিকার ৫’শ বেকার এখনও পথেপথে

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি , ২০২২, ০৯:৫৩:৫৮ পিএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
1642521280.jpg
উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতির নামে যশোর নড়াইল ও মাগুরায় ভয়াবহ প্রতারণা করা প্রতারক চক্রের সবার মোবাইল ফোন এখন বন্ধ। ৫ শতাধিক বেকার যুবককে পথে বসিয়ে তারা গা ঢাকা দিয়েছে। উচ্চ বেতন দেয়ার নামে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায় পদ বিক্রি করা উদয়নের অসাধু চক্রের লোকজনকে খুঁজছে ভুক্তভোগীরা। পথে বসে যাওয়া ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে দ্রুত প্রতারক চক্রকে আটক ও টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে তথ্য মিলেছে, ২০২০ সালের প্রথম দিকে উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতি (ইউএসকেএস) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে অফিস নেয়া হয় যশোর, নড়াইল ও মাগুরা জেলায়। বায়ু মন্ডলে কার্বণহ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ বেইজ লাইন সার্ভে করার কাজ শুরু করে। নড়াইলের বাসিন্দা গোলাম আকবর নামে এক ব্যক্তি খুলনা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে একটি প্রতারক চক্রকে সাথে নিয়ে ৩ জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করে জামানত নিয়ে এরিয়া ম্যানেজার, শাখা ম্যানেজার, মাঠ কর্মী ও মনগড়া আরো কয়েকটি পদে নিয়োগের নামে ৩ জেলা থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। যশোর শিক্ষাবোর্ড এলাকায় নেয়া হয় যশোর অফিস। ঢাকা মতিঝিলের দিলকুশায় উদয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বলে প্রচার করে গোলাম আকবর প্রশাসনিক কর্মকতা সাইফুল ইসলাম, সিইও জাহিদুর রহমান খানের নাম ভাঙিয়ে অর্থ আদায় শুরু করেন। যশোর, মাগুরা ও নড়াইল এলাকার সহজ সরল বেকার যুব সমাজ প্রতারাণায় পড়ে বাড়ির খুঁটিনাটি বিক্রি করে জামানতের নামে ওই প্রতারক চক্রের হাতে টাকা তুলে দেন। এরপর ৫ শতাধিক কর্মীকে তিন জেলার গ্রামে গ্রামে গাছ জরীপের কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়, যাতে তারা বুঝতে পারে তারা চাকরি করছেন। প্রত্যেককে ১০ হাজার থেকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কারো কারো ২২ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেয়া হবে মর্মে নিয়োগ পত্রও দেয়া হয়। চাকরি পেয়েছে ভেবে যশোর, নড়াইল ও মাগুরার ওই বেকারগণ গ্রামে গ্রামে ছুটে কাজ শুরু করেন। উদয়নের ফরম হাতে নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিবারে পরিবারে ছুটে গাছ জরীপ করেন। ৩ থেকে ৪ মাস হাড়ভাঙা খাটুনি করেও তারা বেতন ভাতার মুখ চোখে দেখেননি। এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের সাথে তারা প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। অনেককে উদয়নের নামে অনেক প্রতিশ্রুতিও দিয়ে আসেন কর্মীরা। অথচ সবই ছিল ভুয়া। ৪ মাসে তারা বেতন পাননি আর তাদের দেয়া জামানতের টাকাও পাননি। ৩ জেলার অফিসে এখন তালা ঝুলছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা যশোরের জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকা দপ্তরেও অভিযোগ করা হয়। এ ব্যাপারে দৈনিক গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ টাকা ফেরত দেবেন, অফিস খুলবেন, বেতন দেবেন বলেও জানান ভুক্তভোগীদের।  কিন্তু কয়েক মাস ঘুরিয়ে একটি টাকাও না দিয়ে অফিসার সেজে বসা চক্রটি আত্মগোপনে চলে গেছে। এখন তারা কারো ফোন  ধরছে না। আবার কারো কারো ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে দিনের পর দিন। যশোরের জেলা ব্যবস্থাপক পদে চাকরি পাওয়া রুহুল কুদ্দুসসহ যশোর সদর উপজেলার শতাধিক যুবক প্রতারণার শিকার। জেলা ব্যাবস্থাপক নিজেই ২০ হাজার টাকা দিয়ে পদ পান। তিনিসহ  শ’ শ’ বেকার জামানত ও বেতন না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে চলেছেন। এখন তারা মিডিয়ার শরণাপন্ন হচ্ছেন।   এ ব্যাপারে যশোরের এরিয়া ম্যানেজার পদ পাওয়া রাজু শেখ, ফতেপুরে শাখা ব্যবস্থাপক মোতালেব হোসেন, কচুয়ার শাখা ব্যবস্থাপক জাহিদুর রহমান, রিয়াদ হোসেন, নরেন্দ্রপুরের আল আমিন, বস্ুিন্দয়ার আল মামুন, মাঠকর্মী বিথি, জুথি, জোহরা রেবেকা. খাদিজা, আসমা, বিজয় সমিরণসহ কমপক্ষে ৪০ জন গ্রামের কাগজের এ প্রতি্েবদকের কাছে অভিযোগ করেন তারা প্রতারণার শিকার। তাদের পথে বসিয়েছে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক  দাবি করা আলোচিত প্রতারক গোলাম আকবর। তারা গোলাম আকবরের হাতে টাকা গুনে দিয়েছিলেন জামানত হিসেবে।  তাদের পদ দিয়ে কাজ করিয়ে বেতন দেয়নি। উল্টো তাদের টাকা  আত্মসাৎ করেছে। তিন জেলায় ৫ শতাধিক বেকার এই উদয়ন চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ অঞ্চল থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়েছে ওই চক্রটি। এ ব্যাপারে তারা সরকারের উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এরিয়া ম্যানেজার পদ পাওয়া রাজু শেখও একজন প্রতারক। তিনিও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। তার ফোনটিও এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এবং খুলনা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক দাবি করা গোলাম আকবর জানিয়েছেন, তার হাতে কেউ টাকা দেননি।  টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। অন্য কেউ টাকা নিতে পারেন। উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রশাসনিক কমকর্তা ও পরিচালক সাইফুল ইসলাম এক নোটিশে জানিয়েছেন, গোলাম আকবর মাগুরা, যশোর ও নড়াইলে প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে কারণে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গেলাম আকবর অনেক অনৈতিক কর্মকান্ড করেছেন। তদন্ত করে প্রতরণা ও অর্থ আত্মসাতের  ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এদিকে যশোরে জেলা ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রুহুল কদ্দুুস গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও প্রতারণার শিকার। বিভাগীয় ব্যবস্থাপক গোলাম আকবর এজকন প্রতারক। ৩ জেলায় তিনি প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে এখন পালিয়েছেন। যশোরের শ’শ’ যুবক ধরাশায়ী হয়েছেন প্রতারণার জালে। আর অফিস গুটিয়ে সটকে পড়েছে ওই চক্রটি।

আরও খবর

🔝