gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
ফুলবাড়ীতে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী তন্ত্র-মন্ত্রের ‘পাতা খেলা’
প্রকাশ : রবিবার, ৯ জানুয়ারি , ২০২২, ০৩:০৮:৩৩ পিএম
প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ::
1641720103.jpg
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হলো গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী তন্ত্র-মন্ত্রের ‘পাতা খেলা’।শনিবার বিকালে সুজাপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে সুজাপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এ খেলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন খেলাটির উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুল। এতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস ছাত্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নীরু শামনুন্নাহার, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশ্রাফুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য রাজু কুমার গুপ্ত, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্যানেল মেয়র মামুনুর রশিদ চৌধুরী, ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম ডিফেন্স, দৈনিক দেশ মার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক প্লাবন শুভ প্রমুখ। সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের মাঝখানে পুঁতে রাখা হয়েছে একটি কলাগাছ। গোড়ায় পানিভর্তি মাটির ঘটি। পারপাশ চুন দিয়ে বৃত্তাকারে ঘিরে রাখা হয়েছে। খেলার মাঠটিও বৃত্তাকারে চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। ঘটির পানিতে হাত ভিজিয়ে মাঠের বিভিন্ন পাশে খেলোয়াড়রা অবস্থান নিয়ে মাটিতে হাত রেখে শুরু হয় মন্ত্র পড়া। খেলায় ১০ জন মন্ত্রী (ওঝা বা তান্ত্রিক) এবং হাত খেলা বা পাতা হিসেবে ছিল জন। মন্ত্রী বা তান্ত্রিক হিসেবে অংশ নেন খবিরুল ইসলাম, সাকির বাবলু, ছহির উদ্দিন, বাবলু হোসেন, আবু তাহের, মেহেদী হাসান, মনিরুল ইসলাম, মোকাররম হোসেন, মতিয়ার রহমান ও শ্যামল চন্দ্র। অন্যদিকে হাত খেলা বা পাতা হিসেবে অংশ নেন আক্তারুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান ও রহমত আলী।জানা যায়, খেলায় ওঝা বা তান্ত্রিক মন্ত্রের সাহায্যে বেশি পাতাকে বস করে দাগের বাইরে নিয়ে আসতে পারলে সেই ওঝা বা তান্ত্রিক জয়লাভ করবে। অন্যদিকে পাতা ওঝার মন্ত্রে নিজেকে স্থির রেখে দাগের ভেতরে থাকতে পারলে তাকেও বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। ওঝা তার লক্ষ্য পূরণে ‘দুই চোখে দেখাদেখি/চার চোখে টানাটানি/সপ্ত চোখে বস/ওরে বম/আমাকে ছাড়িয়া যদি অন্যদিকে যাস/দোহাই তোর-মহাদেব/দোহাই তোর- ঈশ্বরের মাথা খাস’ মন্ত্রের সাহায্যে পাতাকে বস করে দাগের বাইরে নিয়ে আসতে কৌশল অবলম্বন শুরু করেন। কিন্তু মন্ত্রের শক্তিতে অনেক পাতা পরাস্ত করে বৃত্তের ভেতরে অবস্থান করে। আবার অনেকে বৃত্তের বাইরে ছুটে চলে আসে। দর্শকদের করতালি উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে চলে খেলা। গ্রাম বাংলা এ ঐতিহ্যবাহী দেখা দেখতে হাজারো নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। টানা প্রায় ২ ঘণ্টা পর শেষ হয় তন্ত্র-মন্ত্রের পাতা খেলা।খেলায় স্থানীয় খবিরুল ইসলামের দল দুইটি পাতা টেনে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং একটি পাতা টেনে রানার আপ হন সাকির বাবলুর দল।  শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যাম্পিয়ন দলকে একটি খাসি ও রানার আপ দলকে দুটো রাজ হাঁস তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিদ্বয়। আয়োজকরা বলেন, গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা বিলুপ্তির পথে। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরতে রাখতে এমন আয়োজন করা হয়েছে। এতে করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ কিছুটা বিনোদন পেয়েছে। আমরা চাই সামাজিক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সহনশীলতার চর্চা অব্যাহত থাকুক। 

আরও খবর

🔝