gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে মানুষ
প্রকাশ : শুক্রবার, ৫ নভেম্বর , ২০২১, ১২:৩৯:৪৪ পিএম
আশিকুর রহমান শিমুল : :
1636134410.jpg
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে যশোরে জনজীবনে প্রভাব ফেলেছে। যশোর থেকে ১৮ টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। সকাল থেকে গণপরিবহন না পেয়ে বিকল্পভাবে প্রত্যেকের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা। অনেকেই না জেনে বাড়ি থেকে বের হয়ে বেকায়দায় পড়েন। সকাল ১০ টায় শহরের মণিহার, শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে একই চিত্র ছিল। গ্রামের কাগজের প্রতিবেদকরা এসব স্থানে গিয়ে মানুষের দুর্ভোগ দেখতে পান। দুর্ভোগে পড়া মানুষের অনেকেই বলেন, আকস্মিকভাবে পরিবহন ধর্মঘট দেয়ায় তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অটোরিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা। যে জায়গার বাস ভাড়া ১৫ টাকা ছিল সেই জায়গায় যেতে নেয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে থাকা খাইরুল আলম জানান, তিনি মাগুরা যাবেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন, পরিবহন ধর্মঘট। কোনো বাস চলবে না।  যশোর থেকে মাগুরা পর্যন্ত বাস ভাড়া ৫০ টাকা। বাস বন্ধ থাকায় ইজিবাইকে ভাড়া দাবি করছে একশ’ টাকা। কোনো উপায় না থাকায় ওই টাকা দিয়েই তাকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। ইজিবাইক চালক আব্দুল মালেককে ভাড়া বাড়িয়ে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে তাদের আয় একটু বেশি হচ্ছে। তবে, খরচও বাড়ছে। তাই জীবনের ঝুঁক নিয়ে বেশি ভাড়ায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।বিশ্বনাথ নামে এক হকার জানান, তিনি যশোর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ফেরি করে মেয়েদের জামা-কাপড় বিক্রি করেন। ধর্মঘটে তাদের মতো গরিবদের কতটুকু কষ্টে পড়তে হয় সেটা একমাত্র তারাই জানেন। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ৪ নভেম্বর ধর্মঘটের ডাক দেয় বিভিন্ন জেলার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন। তারা জানায়, জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম না কমানো পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানান, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতের। এমন সময় তেলের দাম এক লাখে ১৫ টাকা বৃদ্ধি জুলুম। ডিজেলের দাম না কমা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।অন্যান্য বাহনে দ্বিগুণ ভাড়া পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিনেই সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন যশোর অঞ্চলের যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার বাস বন্ধের ঘোষণার পরই ট্রেনের টিকিটও শেষ হয়ে যায়। যশোর থেকে আশপাশের জেলাগুলোতে যাওয়ার জন্যেও দ্বিগুণ হয়ে গেছে থ্রিহুইলার-ইজিবাইক ভাড়া। ফলে, গন্তব্যে পৌঁছাতে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। শুক্রবার সকাল থেকেই মণিহার, খাজুরা ও শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। বাসের কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও কোনো টিকিট বিক্রি হয়নি। বরং বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের কাছ থেকে টিকিট ফেরত নেয়া হয়। মণিহার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রী তোলে থি-হুইলার ও ইজিবাইক। প্রতিটি রুটেই যাত্রী তোলার আগেই তাদের সাথে দ্বিগুণ ভাড়ার চুক্তি করে নেন চালকেরা। যশোর থেকে নড়াইল বাসে ৫০ টাকা ভাড়া হলেও এসব বাহনে আদায় করা হয় একশ’ টাকা করে। দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মফিজুল ইসলাম নামে এক ইজিবাইক চালক জানান সবাই দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন, তাই তিনিও নিচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়পরিবহন ধর্মঘট কাজে লাগিয়ে অধিক ভাড়া আদায় করেন যশোরের অ্যাম্বুলেন্স চালকেরাও। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে হাসপাতালে আগত ও ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরা রোগীদের। প্রতিদিন যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে যশোরের আশেপাশের কমপক্ষে চার জেলার মানুষ আসেন সেবা নিতে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে যশোর-মাগুরা সড়কের কোদালিয়ায় মোটরসাইকেল খাদে পড়ে আহত হন মোজাম্মেল নামে এক ব্যক্তি। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার তাকে খুলনা রেফার করেন। ওইসময় পরিবারের লোকজন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গিয়ে পড়েন বিড়ম্বনায়। যশোর থেকে খুলনার ভাড়া ২২শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা। কিন্তু তাদের কাছে ভাড়া চাওয়া হয় ৩৫শ’ টাকা। ভাড়া বেশির কারণ জানতে চাইলে অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা জানান, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। সকল পরিবহন ধর্মঘট করলেও অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা কোনো ধর্মঘট করছে না। আগে খুলনায় ভাড়া নিয়ে গেলে তাদের পাঁচশ’ টাকা থাকতো। কিন্তু ওই ভাড়ায় এখন রোগী নিয়ে গেলে পকেট থেকে টাকা দিতে হবে বলে দাবি চালকদের। কষ্টে চালক-হেলপাররা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চলছে ধর্মঘট। এ কারণে হতাশায় ভুগছেন চালক-হেলপাররা। পরিবার পরিজনের খরচ যোগাতে তারাও সমস্যায় আছেন। তেলের দাম স্বাভাবিক না হলে সড়কে গাড়ি ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন মালিকরা। ধর্মঘটের প্রভাবে সকালে থেকে নিউ মার্কেট ট্রাক স্ট্যান্ডে সারি বেধে দাঁড়িয়ে ছিল গাড়িগুলো। চালক-হেলপাররা হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিলেন। গাড়ির মালিকদের অভিযোগ, হঠাৎ করে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে লিটারে ১৫ টাকা। ৬৫ টাকার তেল কিনতে হবে ৮০ টাকায়। তেলের দাম বাড়লেও বাড়েনি গাড়ি ভাড়া। তেলের দাম স্বাভাবিক না করলে সড়কে গাড়ি ছাড়বেন তারা।ট্রাক হেলপার মনু মিয়া জানান, তারা দিন এনে দিনে খান। একদিন ধর্মঘট থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে চলা দায়। তার ওপর ঘরে অসুস্থ বাবা রয়েছেন। তার প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হয়। এভাবে ধর্মঘট দিলে দিন চলা কষ্ট হয়ে যায়। এ পেশার সাথে জড়িত মালিক ও শ্রমিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

আরও খবর

🔝