gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
এক পরিবারে টিসিবির পাঁচ লাইসেন্স!

❒ ভর্তুকির পণ্য মুদি দোকানে বিক্রির অভিযোগ

প্রকাশ : বুধবার, ৩ নভেম্বর , ২০২১, ০৮:৫৯:৩৬ পিএম
এম. আইউব:
1635953892.jpg
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এটি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে পণ্য বিক্রি করে থাকে। এই পণ্য যাতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ পান সেই লক্ষ্যে ডিলারদের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। নজর রাখা হয় এক জায়গায় যাতে একাধিক লাইসেন্স না যায়। কিন্তু যশোরের বসুন্দিয়ার নূর মোহাম্মদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। এক নূর মোহাম্মদের পরিবারেই রয়েছেন টিসিবির পাঁচজন ডিলার। অনুসন্ধানে জানাগেছে, বসুন্দিয়ার নূরমোহাম্মদ নিজে, দু’ছেলে, মেয়ে ও জামাইয়ের নামে টিসিবির লাইসেন্স নিয়েছেন অনৈতিক পন্থায়। তার পরিবারের পাঁচটি লাইসেন্সের মধ্যে তিনটি বসুন্দিয়ায় ও দু’টি মণিরামপুরে। বসুন্দিয়ার তিনটির মধ্যে একটি নূর মোহাম্মদের নামে। দু’ছেলের নামে নিয়েছেন বাকি দু’টি। এই তিনটি লাইসেন্স হচ্ছে, মেসার্স নূরমোহাম্মদ ট্রেডার্স, রিফাত এন্টারপ্রাইজ ও আরাফাত এন্টারপ্রাইজ। দু’টি লাইসেন্স মণিরামপুরের ঠিকানায়। এর একটি মেয়ের নামে, অপরটি জামাইয়ের। এই দু’টি লাইসেন্স হচ্ছে, রিক্তি এন্টারপ্রাইজ ও নোমান এন্টারপ্রাইজ। যখন অন্যান্যরা টিসিবির লাইসেন্স গ্রহণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় এক নূরমোহাম্মদের পরিবারে পাঁচটি লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বসুন্দিয়ার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, নূরমোহাম্মদ অনৈতিক পন্থায় একাই পাঁচটি লাইসেন্স গ্রহণ করেছেন। কেবল তাই না, তার বিরুদ্ধে টিসিবির ভর্তুকি পণ্য বিক্রি করা নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খোলাবাজারে সয়াবিন তেল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নূরমোহাম্মদ তার পাঁচটি লাইসেন্সের পণ্য কমবেশি বিভিন্ন মুদি দোকানে বিক্রি করছেন। ফলে, নির্ধারিত সংখ্যক মানুষ ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে পারছেন না। নূরমোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইচ্ছেমতো পণ্য উত্তোলন করেন। ভোক্তাদের কাছে যে পণ্যের চাহিদা কম সেই পণ্য নিতে চান না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তখন অন্যান্য পণ্য দিতে না চাইলে নূরমোহাম্মদ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে নানা ধরনের অভিযোগ করেন।এ বিষয়ে ডিলার নূরমোহাম্মদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবারে দু’জন, আপনি পাঁচজন কোথায় পেলেন। আপনি এলাকায় আসেন তাহলে সবকিছু জানতে পারবেন।’যশোর জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় কিছুদিন ভিড়ের মধ্যে যাচ্ছি না। বিধি অনুযায়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার তদারকির দায়িত্ব থাকলেও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় একটু নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হচ্ছে। ফলে, ঠিকমতো খোঁজখবর রাখতে পারছি না। এ কারণে বিষয়টি আমার জানা নেই।’ বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের থাকলেও সরকারি এই সংস্থাটি যশোরে যেন নির্বিকার। এই সংস্থার জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান টিসিবির পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে গাছাড়াভাবে চলছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ফলে, ডিলাররা চলছেন তাদের ইচ্ছেমতো। টিসিবির ঝিনাইদহ অফিসের সহকারী কার্যনির্বাহী ও অফিস প্রধান সোহেল রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিলার নূরমোহাম্মদ একজন সুবিধাবাদী চরিত্রের লোক। টিসিবি বিপদে থাকলে তাকে পাশে পাওয়া যায় না। যে পণ্যের চাহিদা কম সেই পণ্য তিনি নিতে চান না। এ কারণে গত বছর তাকে শোকজ করা হয়। এরপর তাকে ছয়মাস পণ্য বিক্রি থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। এ ধরনের কাজ আর করবেন না বলে মুচলেকা দেয়ায় পরে তাকে আবার পণ্য দেয়া হচ্ছে।’ মুদি দোকানে টিসিবির পণ্য বিক্রির বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। কেউ প্রমাণ দিতে পারলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

আরও খবর

🔝