gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সাফল্য করোনকালে নস্যাৎ হয়েছে’
প্রকাশ : রবিবার, ৩১ অক্টোবর , ২০২১, ০৯:২৬:০০ পিএম
কাগজ সংবাদ:
1635694333.jpg
যশোরে অনুষ্ঠিত এক সভায় অংশ গ্রহণকারীরা বলেছেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের যে অর্জন তা করোনাকালে নস্যাৎ হয়ে গেছে। এই সময়ে অসংখ্য নারী শিশুর বাল্যবিবাহ হয়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদির কারণে পরিবারের সদস্যরা মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাও বাল্যবাহ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল। রূপান্তর, রাইটস যশোর এবং আভাস’র উদ্যোগে রোববার এফপিএবি মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, সুনির্দিষ্ট আইন, সরকারের নানা উদ্যোগ এবং স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকার পরও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। কোন একটা এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হলে কনেকে অন্য স্থানে নিয়ে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভুয়া জন্মনিবন্ধন এবং নোটারি পাবলিকদ্বারা এফিডেভিট করিয়ে বিবাহ নিবন্ধন করা হচ্ছে। অনেক স্থানে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার এবং মসজিদের ইমামরা বিয়ে পড়িয়ে উপযুক্ত বয়স হওয়ার পর নিবন্ধনের কাগজ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ততদিনে বাল্যবিয়ের শিকার শিশুরা মা হচ্ছে, অনেকের তালাক পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।ইউএসএইড, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং ইউকে এইড এর সহযোগিতায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক সংগঠনসমূহকে উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পের অধীনে অনুষ্ঠিত সভার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপপরিচালক হুসাইন শওকত। সভাপতিত্ব করেন আব্বাস উদ্দিন। সভায় যশোরের আট উপজেলার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ব্রিগেডের সদস্যরা বক্তৃতা করেন। এসময় একাধিক বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের তথ্য তুলে ধরেন তারা। তাদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, গত আট মাসে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে যশোরের মধ্যে শীর্ষে বাঘারপাড়া উপজেলা। এসময় ৭৬টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে এই উপজেলায়। অন্যান্য উপজেলায় পাঁচ থেকে ১৫টি পর্যন্ত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ঘটনাও ঘটেছে গত দুই বছরে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয় জানিয়ে বক্তারা বলেন, সাফল্যের চেয়ে বাল্যবিয়ে হয়ে যাওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষ করে করোনা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর অনেক নারী শিশুর বিয়ের খবর নজরে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাকরি হানানোর ভয়ে এসব গোপন রেখেছেন শিক্ষকরা। এ পর্যায়ে মণিরামপুরের একটি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র দুই ছাত্রী ছাড়া বাকিদের বিয়ে হওয়ার তথ্য জানানো হয়। অন্য একটি মাদ্রাসায় ১৭ ছাত্রীর বিয়ের তথ্যও জানান অংশ গ্রহণকারীরা। অংশ গ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, সরকার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি নামে একটি কমিটি করলেও তা সম্পূর্ণ অকার্যকর। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব কমিটি সভা পর্যন্ত করেন না। সাধারণ মানুষ জানেনও না এর সদস্য কারা, তাদের কাজ কী ইত্যাদি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনদেরও কোন নজরদারি নেই।বাল্যবিবাহ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা অভিহিত করে অংশ গ্রহণকারীরা বলেন, এই ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। সে কারণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও জোরদার করতে হবে। একইসাথে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের সংস্কার করার পাশাপাশি বিয়ে সংক্রান্ত যে কোন এফিডেভিট আইনগত নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে বিধান তৈরির আহ্বান জানানো হয় সভায়।সভায় হুসাইন শওকত সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জন্মনিবন্ধনের মতো বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেও সাফল্য লাভ করা হবে। এজন্য তিনি নিজে উদ্যোগী হবেন বলে আশ্বাস দেন। সভায় অংশ গ্রহণকারীরাও হাতে হাত রেখে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অসিম কুমার সাহা, রূপান্তরের প্রকল্প সমন্বয়কারী অসিম আনন্দ দাস, এফপিএবি’র জেলা কর্মকর্তা আবিদুর রহমান, কাউন্সিলর নাসিমা আক্তার জলি, পিপি শাহনাজ পারভীন ছন্দা, রাইটস যশোরের ডাইরেক্টর প্রোগ্রাম প্রদীপ দত্ত, প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর এস এম আজহারুল ইসলাম, দৈনিক গ্রামের কাগজ’র বার্তা সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের ফিল্ড সুপারভাইজার আলমগীর হোসেন, প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরোজ, বাঘারপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক ইকবাল হোসেন এবং ইউপি মেম্বর বজলুর রহমান।   

আরও খবর

🔝