gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
যশোরে ভোজ্যতেলের রেকর্ড মূল্য

❒ করোনা পরিস্থিতিতে দু’বছরের ব্যবধানে মূল্য দ্বিগুন হয়েছে

প্রকাশ : সোমবার, ২৫ অক্টোবর , ২০২১, ১০:১৩:২৬ পিএম
জাহিদ আহমেদ লিটন:
1635178436.jpg
যশোরের বাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড মূল্যে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। এ তেলের উত্তাপে দিশেহারা মানুষ। কোনভাবেই এ মূল্যের লাগাম টানতে পারছে না কেউ। গত দু’বছরের ব্যবধানে খুচরো বাজারে প্রতিকেজি ভোজ্যতেলের দাম দ্বিগুন হয়েছে। এ কারণে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। তবে কেন, কী কারণে তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেটা মানুষ জানতে পারছে না। বলা হচ্ছে চাহিদা ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশে তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।   সোমবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, ডাল, সাবান, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এসব মালামালের দাম শুনেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সবচেয়ে বেশি বেসামাল পরিস্থিতি ভোজ্যতেলের বাজারে। বর্তমানে বাজারে দ্বিগুন মূল্যে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত দু’বছর আগে ২০১৯ সালে যশোরের বাজারে প্রতিকেজি খোলা সোয়াবিন (ব্যারেলের) তেল বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি। সুপার সয়াবিন তেল প্রতিকেজি ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, পামওয়েল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি ও সরিষার তেল ৯০ থেকে ১শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কনটেইনারের প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ৯৫ থেকে ১শ’ টাকা ও ৫ লিটার ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সে মূল্য দ্বিগুন বেড়ে প্রতি কেজি খোলা সোয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, সুপার সয়াবিন তেল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, পামওয়েল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২শ’ টাকা। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাজারে গিয়ে তাদের তেল কিনতেই সব টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। চাল-ডাল কেনার মত টাকা তাদের হাতে থাকছে না। এ ক্ষেত্রে মানুষ নিরুপায়, তাদের কিছুই বলার নেই। ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারছে না। তারা বলছেন, যে দামে তারা পাইকারি দরে তেল কিনছেন, সামান্য লাভে সেই দামেই তারা মানুষের কাছে খুচরো বিক্রি করছেন।শহরের বড় বাজারে আসা বেজপাড়া এলাকার মিনতী রাণী বলেন, জীবনের ইতিহাসে তিনি সর্বোচ্চ মূল্যে বাজার থেকে সয়াবিন তেল ক্রয় করছেন। এর আগে কোনদিন এ দামে তিনি তেল কেনেননি। এক কেজি সয়াবিন তেল ১৬০ টাকায় কিনতে গিয়ে তার বাজারের সব টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির আগে তিনি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে এই তেল কিনেছেন। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে এ তেলে দাম কেন দ্বিগুন হলো সেই প্রশ্নের উত্তর কোন ব্যবসায়ী জানাতে পারছেন না। শহরের ঘোপ জেল রোডের সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারের সব বাজেট তেলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের চাল-ডাল কেনার মত সামর্থ থাকছে না। তিনি এ ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং কমিটির কঠোর তদারকির দাবি জানান।    শহরের বড় বাজার হাটখোলা সড়কের দু’জন পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে সোয়াবিন তেলের পাইকারি বাজার সিঙ্গাপুর নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ এ বাজার আগে ছিল মালয়েশিয়ায়। চীন বর্তমানে সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাপকহারে সয়াবিন তেল কিনে মজুদ করছে। এ কারণে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে ও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের তিনটি আমদানিকারক কোম্পানি বেশিদামে সিঙ্গাপুর থেকে তেল কিনছে। এক্ষেত্রে তাদের ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক প্রদান করতে হচ্ছে। তারা বলেন, এরআগে এশিয়াঞ্চলে সয়াবিন তেলের এতো চাহিদা ছিল না। মূল্য বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ। এছাড়া সরকার ভোজ্যতেলের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করায় বর্তমানে দেশে রেকর্ড মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এ ব্যাপারে যশোর জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, গোটা এশিয়া জুড়ে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। সরকার তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য কমদামে টিসিবির মাধ্যমে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। যাতে তারা এর সুবিধা ভোগ করতে পারে। তিনি বলেন, যশোরের বাজার তারা নিয়মিত তদারকি করছেন। যদি কোন ব্যবসায়ী তেলের অতিরিক্ত দাম আদায় করে, তবে সেইসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরের বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করা ও প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হয়ে থাকে। যাতে বাজার দর নিয়ন্ত্রণে থাকে ও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করতে না পারে।

আরও খবর

🔝