gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
কেশবপুরে সাপের উপদ্রবে আতঙ্কে মানুষ
প্রকাশ : শুক্রবার, ২৭ আগস্ট , ২০২১, ০৮:০৮:৫৫ পিএম
কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর):
কেশবপুরে সম্প্রতি বিষধর সাপের কামড়ে ৩ ব্যক্তি মারা গেছেন। উদ্ধার হয়েছে ২১টি বিষধর গোখরো সাপ। হঠাৎ বিষধর সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামের মানুষের ভেতর আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগেও দুই ভাইবোনসহ এক গৃহবধূ মারা গেছেন সাপের কামড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালে সাপের বিষ প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনাম রয়েছে। তবে সাপে কামড়ানো রোগীদের বাড়িতে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করার পর মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে তখন ডাক্তারদের কিছুই করার থাকে না।
হাসপাতাল ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট ভোরে গোখরো (জাত) সাপের কামড়ে উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের মৃত ইফাজ তুল্লার ছেলে ভ্যানচালক ইজহার আলী গাজীর (৬৮) মৃত্যু হয়। সাপটি উদ্ধার করে এলাকাবাসী মেরে ফেলে। গত ২৯ জুন উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের ভ্যানচালক আলমগীর হোসেনের বসতঘর থেকে ২০টি গোখরো সাপের বাচ্চা উদ্ধার করে মেরে ফেলা হয়। একসঙ্গে এত গোখরো উদ্ধার হওয়ায় ওই গ্রামের মানুষের মধ্যে সাপ আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। গত ৬ জুলাই উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কোমরপোল গ্রামের আব্দুল্লাহ মোড়লের ছেলে কৃষক জাকির হোসেন (৪০) মাঠে ঘাস কাটতে গেলে একটি বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে তিনি মারা যান। গত ৩ মে রাতে পৌরসভার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে আবু হানিফ (১৪) স্থানীয় বর্ষাখোড়ার মোড়ে ঘুরতে গেলে একটি বিষাক্ত সাপে কামড় দেয়। খুলনায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া ২০২০ সালের ১১ জুন হাসানপুর ইউনিয়নের টিটাবাজিতপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের মেয়ে কুলসুম খাতুন (১০) ঘরের বারান্দায় রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বিষাক্ত সাপে কামড় দিলে মুমূর্ষু অবস্থায় খুলনায় নেওয়ার পথিমধ্যে তিনি মারা যান। ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মোমিনপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের স্ত্রী রুকাইয়া বেগমকে (২৫) ঘুমন্ত অবস্থায় একটি বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে তিনি মারা যান। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট রাতে উপজেলার বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের হাড়িয়াঘোপ গ্রামের রেজোয়ান খাঁর মেয়ে আছিয়া খাতুন (১১) ও ছেলে আব্দুস সালামকে (৭) ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় বিষাক্ত সাপ তাদের পিঠ ও হাতে কামড় দেয়। ছেলেটি কেশবপুরের একটি ক্লিনিকে ও মেয়েটিকে খুলনায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। দুটি সন্তানই মারা যাওয়ায় এখনও ওই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
সাপের কামড়ে মারা যাওয়া এসব ব্যক্তিদের শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হলে গ্রাম্য ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। একপর্যায়ে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসার জন্য কেশবপুর হাসপাতালে আনা হলে কিংবা খুলনায় নেওয়ার পথিমধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। এর মধ্যে মারা যায় অন্তত ছয় হাজার মানুষ। সাপে কামড়ানোর পর যারা প্রাণে বেঁচে যান, তাদের জীবনে এর সূদুর প্রসারী প্রভাব পড়ে। দংশনের কারণে অনেকের জীবন-জীবিকা দারুণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। সাপের কামড় হল সর্বোচ্চ অবহেলিত ‘ট্রপিক্যাল ডিজিজ’।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে সাধারণত পাঁচ ধরনের বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এগুলো হলো গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, সবুজ সাপ ও সামুদ্রিক সাপ। ‘সর্প দংশনের চিকিৎসা নীতিমালা ২০১৯’ অনুযায়ী অ্যান্টি স্নেকভেনম আনুষঙ্গিক চিকিৎসা, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, সাপে কামড় দিলে গ্রামের মানুষ কথিত ওঝা ডেকে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে ঝাড়ফুঁক করিয়ে বিষ নামানোর চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে নিয়ে আসলে তখন আর কিছুই করার থাকে না। গ্রামের মানুষ কুসংস্কার বিশ্বাস করায় হাসপাতালে অ্যান্টি স্নেকভেনম থাকা সত্ত্বেও সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

আরও খবর

🔝