gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
সাতক্ষীরায় ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলায় মূল সার্টিফাইট কপি দাখিলের নির্দেশ
প্রকাশ : বুধবার, ১৮ আগস্ট , ২০২১, ০৮:৩৪:১৭ পিএম
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
1629297420.jpg
সাতক্ষীরায় তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় মূল সার্টিফাইট কপি দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার সাতক্ষীরা সিনিয়র চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীর মামলার বাদী পক্ষকে এই নির্দেশ দেন। নির্দেশে বলা হয়েছে আগামী ১০ দিনের মধ্যে সার্টিফাইট কপি জমা দিলে ২৯ আগস্ট মামলার শুনানি হবে। আদালতের পেশকার জালালউদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করার অপরাধে দায়েরকৃত মামলার এক নম্বর আসামি হলেন সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক হিমেল হোসেন, পিতা- সাইদুর রহমান, গ্রাম-পাংখারচর, থানা-লোহাগড়া, জেলা-নড়াইল। দুই নম্বর আসামি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ। তিন নম্বর আসামি হলেন-তৎকালীন ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা, পিতার নাম আব্দুল কাদের মোল্লা, গ্রাম- করপাড়া, থানা ও জেলা -গোপালগঞ্জ। মামলার বাদী শেখ আব্দুর রাসেদ। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুখরালী গ্রামের শেখ মোফাক্কর রহমানের ছেলে। মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাদী শেখ আব্দুর রাসেদের ছেলে মোখলেছুর রহমান জনি একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। প্রগতি হোমিও হেলথ নামে তার একটি ডাক্তারখানা রয়েছে। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাত ৯ টার দিকে অসুস্থ পিতার জন্য ওষুধ কিনতে বাইসাইকেলে শহরের নিউমার্কেট সংলগ্ন ফার্মেসির উদ্দেশে রওয়ানা হন জনি। সাড়ে নয়টার দিকে নিউমার্কেট এলাকা থেকে সদর থানার উপ-পরিদর্শক হিমেল হোসেন কোনো কিছু না জানিয়েই জনিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ওই রাতেই আনুমানিক দেড়টার দিকে একদল পুলিশ বাদী রাসেদের বাড়িতে যায়। তারা জনির ডাক্তারী চেম্বারসহ সমস্ত ঘর তল্লাশী করেন। পরদিন ৫ আগস্ট সকালে বাদী রাসেদ ও তার পুত্রবধূ জেসমনি নাহার থানা হাজতে যান। সেখানে হোমিও চিকিৎসক জনির সাথে দেখা করেন। এসময় জনি তাদেরকে জানান, এসআই হিমেল তাকে ধরে নিয়ে এসেছে। গ্রেফতার করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে এসআই হিমেল তাদেরকে বলেন, জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। মামলায় বাদী আরো উল্লেখ করেছেন, ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট হতে ৭ আগস্ট পর্যন্ত এই তিন দিন বাদী ও তার পুত্রবধূ সাতক্ষীরা সদর থানা হেফাজতে জনির সাথে দেখা করেন এবং তাকে খাবার দিয়ে আসেন। একইভাবে ৮ তারিখ সকালে বাদী ও পুত্রবধূ খাবার নিয়ে সদর থানায় গেলে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাদেরকে জানান, মোকলেছুর রহমান জনি এই থানায় নেই। তিনি কোথায় আছেন সেটি ওই পুলিশ অফিসার জানেন না বলে তাদেরকে জানান। এরপর এসআই হিমেল হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, উপরি মহল আপনার পুত্রকে কোথায় রেখেছে তার কোনো খবর আমি জানি না। বিষয়টি নিয়ে সেসময় জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। এরপরও মোকলেছুর রহমান জনির কোন সন্ধান না পেয়ে ভিকটিম জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার ২০১৭ সালের ১১ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগে ২৮৩৩/১৭ নম্বর এক রিট পিটিশন করেন। পিটিশনের আলোকে হাইকোর্ট সাতক্ষীরা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল্লাহ মাহমুদকে সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদনের আদেশ দেন। বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা আছে বলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রিপোর্ট দেন। একই সাথে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো আব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তিন সদস্যের টিম গঠন করে তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, পুলিশ হেডকোয়ার্টার ঢাকা এর আইন কর্মকর্তা রেজাউল করিম (অতিরিক্ত জেলা জজ) ঘটনার সত্যতা আছে বলে হাইকোর্টকে অবহিত করেন। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি রিটপিটিশন দায়েরকারী ভিকটিমের স্ত্রী জেসমিন নাহারকে বর্তমান আসামিদের বিরুদ্ধে নি¤œ আদালতে মামলা দাখিলের নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে পিটিশনকারী জেসমিন নাহার অন্যত্র বিয়ে করায় ও সঙ্গত কারণে নি¤œ আদালতে মামলা দাখিল করতে মৌখিকভাবে অনীহা প্রকাশ করায় ভিকটিমের পিতা শেখ আব্দুর রাসেদ ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি প্রদান করেন। মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী  এডভোকেট মোসলেম উদ্দিন জানান, একটি মানবাধিকার সংস্থা ভিকটিমের পিতা রাসেদকে সহায়তা করায় ১৭ আগস্ট সাতক্ষীরা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা করা হয়।

আরও খবর

🔝