gramerkagoj
বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১১ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
বোয়ালমারীতে করোনায় বিপর্যস্ত পত্রিকার এজেন্ট ও বিক্রয় প্রতিনিধিদের জীবন
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই , ২০২১, ০৪:০০:০৬ পিএম
দীপঙ্কর পোদ্দার অপু, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: :
1625741304.jpg
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গত ২১ জুন থেকে টানা  কঠোর লকডাউন চলছে। এর আগে মার্চেও চলেছে কঠোর লকডাউন। স্থানীয় প্রশাসন লকডাউনে কঠোর অবস্থানে থাকায় উপজেলার সব দোকানপাট বন্ধ থাকে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দুই-একজন ব্যবসায়ী দোকানের একাংশ একটু খোলার চেষ্টা করলেই গুণতে হয় জরিমানা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাঝে মাঝেই দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এ অবস্থায় উপজেলার অনেক ব্যবসায়ী দৈনিক পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। আর যেসব ব্যবসায়ীরা এখনো পত্রিকা রাখছেন তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিয়মিত পত্রিকা বিল পরিশোধ করেছেন না। অন্যান্য পেশাজীবির ক্ষেত্রেও অবস্থা খুব একটা ভিন্ন নয়। এ অবস্থা গত বছর মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই শুরু হয়েছে। ফলে এ অবস্থায় উপজেলায় কমতে শুরু করেছে দৈনিক পত্রিকার গ্রাহক সংখ্যা। দিন দিন কমছে দৈনিক পত্রিকার সার্কুলেশন সংখ্যা। আর এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন এ উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন এজেন্ট এবং ২০/২৫ জন বিক্রয় প্রতিনিধি।  রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে  বাইসাইকেলের প্যাডেল মেরে অথবা পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আবার অনেকেই মোটরসাইকেল ও রিক্সায়ও পত্রিকা বিক্রি করেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। তাদের পাশে সরকারি-বেসরকারি কোন সংস্থাই এখনো দাঁড়ায়নি।এমন অবস্থায় আয়-রোজগারের বিপর্যয় ঘটায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পত্রিকা বিক্রির সঙ্গে জড়িত ২০/২৫ জন এজেন্ট ও বিক্রয় প্রতিনিধি। তাদের বেশির ভাগেরই সামান্য আয়-রোজগার। এখন তাও বন্ধের পথে। এদিকে প্রায় সবকটি জাতীয় পত্রিকা গণসচেতনতায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস পত্রিকার কাগজের মাধ্যমে ছড়ায় না। তারপরও বিক্রি তেমন বাড়েনি। এরমধ্যে আবার করোনা ভাইরাসের কারণে কঠোর লকডাউনে অফিস আদালত ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। পত্রিকার বিল তুলতেও হকারদের বর্তমান পরিস্থিতিতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সময়মত পাওনা না পেয়ে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।  লকডাউনের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অল্প সংখ্যক পত্রিকা বিক্রয় হয়।বৃহস্পতিবার সকালে বোয়ালমারী উপজেলার সব চেয়ে বড় পত্রিকা এজেন্সি মেসার্স হাবিবুর রহমানের স্বত্বাধিকারী মো. মনিরুজ্জামানের সাথে কথা হয়। এ সময় তিনি জানান, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সার্কুলেশন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্রাহকদের কাছ বিল বকেয়া হয়ে গেছে। লকডাউনের কারণে আদায় করা যাচ্ছে না। আর্থিকভাবে খুব সমস্যায় আছি। উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের বাগুয়ান গ্রামের রুস্তুম আলী নামে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, সকাল হলেই পত্রিকা সংগ্রহ করে বাই সাইকেলে নিয়ে ছুটে চলেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক উপজেলা পর্যন্ত। বোয়ালমারী উপজেলার পৌর শহর হতে সাতৈর বাজার হয়ে পাশ্ববর্তী মধুখালি উপজেলার নওয়াপাড়া পর্যন্তু তিনি পত্রিকা নিয়ে বাইসাইকেলে বিক্রি করেন। তিনি বাইসাইকেল চালিয়ে কমপক্ষে ২০টি পয়েন্টে পত্রিকা বিক্রি করেন। প্রায় আসা যাওয়া দিয়ে প্রতিদিন ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হয় তার। তিনি আরো জানান, লকডাউন থাকার কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় সেটাও ঠিকমত করতে পারছেন না। ১৫ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে কোনোমত চলছে তার পরিবার নিয়ে জীবন জীবিকা। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমনের আগেই ভালো চলছিল তার জীবন জীবিকা।এ ব্যাপারে মাঝকান্দি-বোয়ালমারী রুটের পত্রিকা এজেন্ট মেসার্স হাবিবুর রহমান এর স্বত্ত্বাধীকারী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু রুস্তুম আলী নন, এ উপজেলার পৌরসদর বাজার, সাতৈর বাজার, মুজুরদিয়া বাজার, চিতার বাজার, ময়েনদিয়া বাজার, সহস্রাইল বাজার, রূপাপাত-কালিনগর বাজার, গোহার্ইলবাড়ির বাজার, খরসূতি বাজারসহ জাতীয় ও স্থানীয় মিলে পত্রিকা বিক্রি করেন প্রায় ১৫ জন বিক্রেতা। তিনি বলেন, যায়যায়দিনসহ এ উপজেলায় করোনাভাইরাসের আগে প্রায় ১২শ পত্রিকা চলতো। এখন সেখানে মাত্র ৬০০ পত্রিকা চলে। লকডাউনের কারণে প্রতি মাসে অধিকাংশের বিলই বাকি থাকছে।

আরও খবর

🔝