gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে

❒ জলবায়ু পরিবর্ত

প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১০ জুন , ২০২১, ০৩:১৭:১৩ পিএম
শেখ মনিরুজ্জামান মনু,কয়রা(খুলনা) ::
1623316991.jpg
 জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যায়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছাস ও নদী ভাঙ্গন সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদগুলো লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এক দিকে যেমন সমুদ্র পৃষ্টের তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে সমুদ্রের পানি উপকূলীয় এলাকায় উপচে পড়ছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ লক্ষ মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর সুন্দরবন উপকূলে প্রলংয়নকারী সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্রগ্রাম কক্সবাজার অঞ্চলে স্মরনকালের ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনার উপকুলে সিডরের তান্ডব এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে খুলনা, সাতক্ষীরা উপকূলে আইলা ও ২০২০ সালের ২০ মে আম্ফান  ভয়াবহ জলোচ্ছাসে গোটা উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। এর সাথে নতুন মাত্রায় নদী ভাঙন যোগ হয়ে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। খুলনার কয়রা, দাকোপ ও সাতক্ষীরার  আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। অব্যহত নদী ভাঙন কেড়ে নিচ্ছে শত শত একর কৃষি জমি, বসত ভিটা, চিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট। এ সকল এলাকায় দিন যতই পার হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ততই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে জমি জায়গা হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান ও দুর্যোগের ঝুঁকিহ্রাস কমাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। জলবায়ু ফান্ডের অর্থায়নে সরকার উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যা্েচ্ছ। সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলো এনজিওদের মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার, কাঁচা রাস্তা নির্মান, ঝড় সহনশীল ঘর তৈরী, পয়নিস্কাশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, গভীর- অগভীর নলকূপ স্থাপন, রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বে সরকারি অনেক সংস্থা দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ঝড় জলোচ্ছাস জনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে। সম্প্রতি সরকারের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীর কিনার ড্যাম্পিং করে বেড়িবাঁধে ব্লক বসানোর কারনে নদী ভাঙন কিছুটা কমেছে। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের বাস্তবায়নাধীন চলমান প্রকল্প চালু থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে সৃষ্ট জলোচ্ছাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এ অঞ্চলের জনসাধারনের জানমাল অনেকটা রক্ষা করা সম্ভব হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় এনে টেকসই প্রকল্প হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে। তবে ব্যাপকভাবে অর্থ বরাদ্ধ দিয়ে উপকুলীয় অঞ্চলের বেড়িবাধ সংস্কার করা হলে এ জনপদের মানুষেরা কিছুটা হলেও দুর্যোগের ক্ষতি থেকে রেহাই পাবে।  কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন,জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যায়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে সামুদ্রিক ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছাস ও নদী ভাঙ্গন সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদগুলো লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন,উপকুলীয় অঞ্চলে টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য প্রধান মন্ত্রীর সাথে দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মানের। সে জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রী ও সচিব একাধিক বার এলাকা পরিদর্শন করেছে। টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।  

আরও খবর

🔝