gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হচ্ছে কুয়াকাটা সৈকতের বনাঞ্চল
প্রকাশ : বুধবার, ২ জুন , ২০২১, ০৬:৪২:০১ পিএম
কলাপাড়া প্রতিনিধি::
1622638139.jpg
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার পূর্ব থেকে পশ্চিমের সৈকতে এখন শুধু ভাসছে সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙ্গে-উপড়ে পড়া শতশত গাছ। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে সৈকতের বালু ক্ষয়ে লেম্বুরবন, ঝাউ বাগান ও গঙ্গামতি সৈকতের শতশত গাছ উপড়ে পড়েছে। বালু ক্ষয়ে হেলে পড়েছে বহু গাছ। এ কারণে হুমকিতে পড়েছে সৈকতের প্রাণ-প্রকৃতি। কুয়াকাটার দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে এক যুগ আগেও ছিলো ঘন বনাঞ্চল। নারিকেল, ঝাউ, শাল বাগান ছাড়াও ছিলো নানা ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ। এ বনে ছিলো নানা বণ্যপ্রাণী। বনের মধ্যে একাকি হাঁটতে শরীর শিউরে উঠতো বিভিন্ন প্রাণীর ডাক ও চিৎকারে। শীতে দূর দেশ থেকে অতিথি পাখি আসতো এ বনাঞ্চলে। এসবই এখন স্মৃতি। সৈকতের নারিকেল ও শাল বাগানের পুরোটাই বিলীন হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন সৈকতে মাথা উঁচু করে নারিকেলসহ কয়েক প্রজাতির গাছ থাকলেও ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে সৈকতে কয়েকশ গাছ ভেঙ্গে উপড়ে পড়েছে। সাগরের ঢেউয়ে প্রায় দুই ফুট বালু ক্ষয়ে যাওয়ায় এ গাছগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। একারণে পূর্ব দিকের সৈকতে এখন ভাঙ্গা গাছের কারণে মূল সৈকতে হাঁটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এদিকে বালুক্ষয়ে সৈকতের বনাঞ্চলগুলো বিলীন হওয়ায় সামুদ্রিক কচ্ছপের বংশবিস্তারে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ার আশংকা করছেন পরিবেশবিদরা। সম্প্রতি লেম্বুরবন ও গঙ্গামতিতে লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হলেও ইয়াস তান্ডবে দুটি স্পটই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে। স্থানীয়রা বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যে বন ছিলো তা প্রতিবছর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন বিলীন প্রায়। এখন যে অবস্থা, সৈকত রক্ষায় জরুরী উদ্যোগ না নিলে সৈকতের অবশিষ্ট গাছগুলোও সাগরে ভেসে যাবে। এ পরিস্থিতে কুয়াকাটা কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সাগরের ভাঙ্গণের কারণে কুয়াকাটা সৈকতের এখন বেহাল দশা। সৈকত রক্ষার উদ্যোগের পাশাপাশি সৈকত ঘিরে খুব শীঘ্রই বনাঞ্চল করা হবে। উদ্যোগ নেয়া হবে প্রান প্রকৃতি রক্ষার।কুয়াকাটার প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা ইকো ফিস-টু প্রকল্পের সহকারী গবেষক বলেন, সমুদ্রের বালু ক্ষয়ের কারণে বনাঞ্চলের গাছ উপড়ে পড়ায় এর বিরুপ প্রভাব পড়বে কচ্ছপের বংশবিস্তারে। কচ্ছপ বনাঞ্চলের বালু খুঁড়ে ডিম পাড়ে। কিন্তু সৈকতের মাটির স্তর বের হয়ে আসায় কচ্ছপ এখানে ডিম ছাড়তে আসবে না। যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে। তাই জরুরী ভিত্তিতে সৈকতের বনাঞ্চল রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে, কেননা প্রকৃতি বাঁচলেই বাঁচবে প্রান।২০০৭ সাল থেকে প্রতিটি ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটা, গঙ্গামতি ও লেম্বুরবনের শতশত গাছ ঝড়ো বাতাস ও সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙ্গে উপড়ে পড়ে। এ কারণে কুয়াকাটা ইকো পার্কের তিন-চতুর্থাংশ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে সাগরের ভাঙ্গণে। একইভাবে সৈকতের ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। তাই পরিবেশবিদসহ সচেতন পর্যটকদের দাবি কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার পাশাপাশি সৈকতের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রক্ষায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা দ্রুততার ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে।

আরও খবর

🔝