gramerkagoj
বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১১ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ভাষা সংগ্রামী কাজী আব্দুস শহীদ লালের জীবনাবসান
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ২০ মে , ২০২১, ০২:৩৩:১৯ পিএম
কাগজ সংবাদ:
1621499789.jpg
প্রবীণ আইনজীবী, প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ও যশোরের সাংস্কৃতিক, সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ভাষা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস শহীদ লাল মৃত্যু বরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)।                                                                                                                 বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে যশোর কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে যশোরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।  কাজী আব্দুস শহীদ লালের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ১৯৩৯ সালের ২৮ নভেম্বর দাদাবাড়ি বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি দীর্ঘদিন হার্ট ও কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার ভোরে বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন কাজী আব্দুস শহীদ লাল। স্বাধীনতা পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে কাজী আব্দুস শহীদ লালের অবদান অনস্বীকার্য। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ছাত্রজীবনে তিনি অবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়ন এবং পরে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপের নেতা ছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ (মোজাফফর), সিপিবি এবং শেষে গণফোরামের রাজনীতি করেন। আব্দুস শহীদ লাল যশোর আইনজীবী সমিতির চারবার সভাপতি ও চারবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর উপদেষ্টা এবং তির্যকের সভাপতি। স্বাধীনতার পর সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে, কৃষক শ্রমিকের দাবি আদায়ের সপক্ষে, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের সপক্ষে সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় প্রথমে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কাজী আব্দুস শহীদ লালের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় উদীচী যশোরে। সংগঠনের সত্যেন মঞ্চে তার মরদেহে ফুলদিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সংবাদপত্র পরিষদ, শিল্পকলা একাডেমি, পুনশ্চ, সুুরধুনী সংগীত একাডেমি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি মার্কসবাদী, বাউলিয়া সংঘ, মহিলা পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, সুরবিতান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, জন উদ্যোগ, গ্রামের কাগজ, সুর নিকেতন, কেশবপুর উদীচী, উৎকর্ষ, ওয়ার্কাস পার্টি, চাঁদের হাট, সুজন স্রোতা কিংশুক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ, জাগপা যশোর, অক্ষর শিশু শিক্ষালয়, মুনশী রইনউদ্দিন সংগীত একাডেমি, যশোর ইনস্টিটিউট, উদীচী এমএম কলেজ শাখা এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ যশোর। পরে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় যশোর এক নম্বর আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে। সেখানে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করে জেলা আইনজীবী সমিতি, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী  আইনজীবী পরিষদ, প্রসিকিউশন ইউনিট, জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি, জাতীয় শ্রমিক লীগ, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, তির্যক, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ক্যাম্পাস থিয়েটার আন্দোলন জেলা শাখা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় যশোরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, জাসদ, বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ, সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ, গদখালি উদীচী, জাতীয় শ্রমিক লীগ, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন, পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়ন, রিকশা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, ন্যাপ, যশোর জেলা পরিষদ ও পৌরসভার কার্যপারিষদ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ আছর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে গার্ড অব অনার প্রদান শেষে অনুষ্ঠিত জানাজায় সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। পরে কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হয় এই কর্মবীরকে।  এদিকে কাজী আব্দুস শহীদ লালের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। বিবৃতিতে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি  শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। কাজী আব্দুস শহীদ লালের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাঘারপাড়া নাগরিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি এজেড এম সালেক, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দীকী, সাধারণ সম্পাদক সবদুল হোসেন, যুবমৈত্রী সভাপতি অনুপ কুমার পিন্টু, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ইউনুস তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক শামীম বিশ্বাস, ছাত্র মৈত্রীর শ্যামল শর্মা অরুপ মৈত্র, সুজন শ্রোতা কিংশুকের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল করিম সোহেল, যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহবায়ক রবিউল আলমসহ নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ আতিকুর বাবু, যশোর জেলা আহবায়ক কামরুজ্জামানসহ নেতৃবৃন্দ এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু।   

আরও খবর

🔝