gramerkagoj
বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১১ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
নারী আর বয়স্কদের দখলে ৯৩তম অস্কার
প্রকাশ : সোমবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২১, ০৩:৪৭:২৫ পিএম
বিনোদন ডেস্ক ::
1619430488.jpg
করোনা আবহে সাদামাটার ভিতরেও বর্ণিল অস্কার পুরস্কার আসর শেষ হল। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে ও ইউনিয়ন স্টেশনে ২৩টি শাখায় পুরস্কার বিতরণের আয়োজন শুরু হয় স্থানীয় সময় ২৫ এপ্রিল বিকেল পাঁচটায়। বাংলাদেশের মানুষের এ আয়োজনটি উপভোগের সুযোগ ছিল ২৬ এপ্রিল ভোর ছয়টা থেকে। এবিসি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সাড়ে তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখানো হয়েছে ২২৫টিরও বেশি দেশে। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় অবশ্য এটি পুণপ্রচার করবে স্টার মুভিজ। এবারের আসরে ঘটেছে অনেক ব্যতিক্রমী কিছু। পুরস্কারের সাথে নতুন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। তবে সব মিলে এটি পরিস্কার। ৯৩ তম আসর বয়স্ক আর নারীদের দখলে। সেরা ছবি হয়েছে ‘নোম্যাডল্যান্ড’। এই ছবির পরিচালক ক্লোয়ি ঝাওয়ের হাতে উঠেছে সেরা পরিচালকের অস্কার। সেরা অভিনেত্রীর নাম ঘোষণার সময় চীনা এই পরিচালকের চোখ ভরে উঠল জলে। কারণ, সেরা অভিনেত্রী আর কেউ নন, ৬৩ বছর বয়সী ফ্রান্সিস ম্যাকডোরম্যান্ড, যিনি একাই টেনে নিয়ে গেছেন ‘নোম্যাডল্যান্ড’ সিনেমাকে। ফ্রান্সিসের সঙ্গে আর যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাঁদের ভেতর ফ্রান্সিস বয়সে সবার বড়। অন্যরা হলেন ভায়োলা ডেভিস (মা রেইনিস ব্ল্যাক বটম), অ্যান্ড্রা ডে (দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ভার্সেস বিল্লি হলিডে), ভ্যানেসা কিরবে (পিসেস অফ আ উইম্যান) ও ক্যারি মুলিগান (প্রমিজিং ইয়াং ওম্যান)। অস্কার হাতে ফ্রান্সিস ‘কোট’ করলেন শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’ থেকে, ‘আমার কিছু বলার নেই। আমার রয়েছে এক ধারালো তলোয়ার। আর সেটিই আমার বর্ণমালা।’ তারপর বলছেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের সেই ধারালো অস্ত্র কী! সেটি আমাদের কাজ, আমাদের অভিনয়। যা বলার, সেটিই বলে। আমার আজ তাই কিছু বলার নেই।’ অবশ্য বলবেন কী, অস্কারকে তো রীতিমতো ডালভাত বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। এটি তাঁর তৃতীয় অস্কার। ‘থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং, মিজৌরি’ আর ‘ফার্গো’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। ‘অলমোস্ট ফেমাস’, ‘নর্থ কান্ট্রি’ আর ‘মিসিসিপি বার্নিং’–এর জন্য আরও তিনবার মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ফলে ছয়টি মনোনয়ন থেকে তিনটি অস্কার বাড়ি নিয়ে গেছেন তিনি।অন্যদিকে, সেরা অভিনেতার ক্ষেত্রে তো রীতিমতো ইতিহাস গড়েছেন অ্যান্থনি হপকিন্স। যেন ‘বুড়ো হাড়ে ভেলকি’ দেখিয়েছেন তিনি। ৮৩ বছর বয়সে অস্কার জয় করে ইতিহাসের পাতায় নাম তুলেছেন। অস্কারের ৯৩ বছরের ইতিহাসে এত বয়স্ক অভিনেতা আর নেই। তিনিই ইতিহাসের সবচেয়ে ‘বুড়ো’ অস্কারজয়ী।হপকিন্সের বাড়িতে আরও একটি অস্কার আছে। ‘দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস’ ছবিতে হলিউডের বড় পর্দায় অমরত্ব পাওয়া ‘হ্যানিবাল লেকচার’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেবার অস্কার জিতেছিলেন তিনি। এই বিভাগের অন্য মনোনয়ন প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন চ্যাডউইক বোজম্যান (মা রেইনিজ ব্ল্যাক বটম), রিজ আহমেদ (সাউন্ড অব মেটাল), গ্যারি ওল্ডম্যান (মাঙ্ক) ও স্টিভেন ইয়ুন (মিনারি)।এদিকে সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন ৭৩ বছর বয়সী দক্ষিণ কোরিয়ান অভিনেত্রী ইয়া-জাং উন। ‘মিনারি’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে এই পুরস্কার হাতে তুললেন তিনি, গড়লেন ইতিহাস। কেননা, এর আগে কোনো দক্ষিণ কোরিয়ান অভিনেত্রী অস্কার স্পর্শ করেননি। সেরা অভিনেতা ও অভিনেত্রীর বেলায় সে কথা খাটে, এ বেলায়ও অক্ষরে অক্ষরে তা সত্য। তাঁর বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া অন্যান্য অভিনেত্রীর তুলনায় বয়সের রাস্তায় তিনিই যে সবচেয়ে এগিয়ে! অন্যান্য মনোনয়ন প্রাপ্তরা হলেন মারিয়া বাকালোভা (বোরাট সাবসিকোয়েন্ট মুভিফিল্ম), গ্লেন ক্লোজ (হিলবিলি এলিজি), অলিভিয়া কোলম্যান (দ্য ফাদার) আর আমান্ডা সাইফ্রায়েড (মাঙ্ক)।অন্যদিকে সেরা সহ-অভিনেতার পুরস্কার হাতে তুলেছেন ব্রিটিশ কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা ড্যানিয়েল কালুইয়া। ‘জুডাস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মেসিয়াহ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার ঘরে তোলেন ৩২ বছর বয়সী এই তরুণ অভিনেতা। এই বিভাগে আরও মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাশা ব্যারন কোহেন (দ্য ট্রায়াল অব দ্য শিকাগো সেভেন), লেজলি ওডোম জুনিয়র (ওয়ান নাইট ইন মায়ামি), পল রাসি (সাউন্ড অব মেটাল) ও লাকিথ স্ট্যানফিল্ড (জুডাস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মোসিয়েহ)। এর আগে ‘গেট আউট’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা অভিনেতা বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ছিল বাফটা, গোল্ডেন গ্লোব, ক্রিটিক্স চয়েস অ্যাওয়ার্ড। তাই তাঁর হাতে অস্কারটা মানানসই। এদিকে ‘মা রেইনি’স ব্ল্যাক বটম সিনেমার জন্য মিয়া নীল আর জামিকা উইলসনের হাতে উঠেছে সেরা মেকআপ আর হেয়ার স্টাইলের পুরস্কার। এই প্রথম এই বিভাগে দুই কৃষ্ণাঙ্গ নারীর হাতে উঠল এই পুরস্কার। এদিকে ‘জুডাস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মোসিয়েহ’ সিনেমার 'ফাইট ফর ইউ' গানের জন্য অস্কার পেলেন ২৩ বছর বয়সী মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ গায়িকা হার।ফ্রান্সিস ম্যাকডোরম্যান্ডকে বাদ দিলে এবারের অস্কারের প্রথম পাঁচটি বিভাগে নেই কোনো ‘হোয়াইট মার্কিন’। স্যার ফিলিপ অ্যান্থনি হপকিন্স মূলত ব্রিটিশ-আমেরিকান। তাই পুরোপুরি মার্কিন বলা যাবে না তাকে। রয়েছেন দুজন এশীয় নারী, চীনের ক্লোয়ি ঝাও আর দক্ষিণ কোরিয়ান অভিনেত্রী ইয়া-জাং উন। সেরা পাঁচের তিনজন ষাটোর্ধ্ব। অস্কারকে ‘বর্ণবাদী’, ‘মার্কিন’ আর ‘পুরুষতান্ত্রিক’ বলে গাল দেওয়ার দিন বুঝি ফুরাল। এবারের অস্কার বৈচিত্র্যের রঙে রঙিন।

আরও খবর

🔝