gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj

❒ তিন সদস্যের কমিটি গঠন

বেনাপোল স্থলবন্দরের শেডে থেকে পণ্য চুরির অভিযোগ
প্রকাশ : শনিবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২১, ০৮:৩৮:৫৯ পিএম
মুসলীম উদ্দীন পাপ্পু, বেনাপোল :
1619275168.jpg
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের বিভিন্ন শেডে থেকে কোটি কোটি টাকার পণ্য চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পায়নি বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো। প্রতিনিয়ত আমদানি মালামাল চুরির ঘটনা নিয়ে কাস্টমস ও বন্দরের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ । বিশেষ করে কাস্টমস এর নিলামকতৃ পণ্য চুরি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরের এক নম্বর শেড থেকে এক হাজার একশ’ দু’টন উন্নতমানের শার্টিং ও প্যান্টিং চুরি করা হয়েছে। যার আমদানিকারক বেনাপোলের এইচবি ইন্টারন্যাশনাল, কাস্টমস মেনিফেস্ট নম্বর ৩৬৩৪০/১। পণ্যটি মিথ্যা ঘোষণায় আনার অভিযোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করে। পরে চালানটি নিলামে বিক্রি করা হয় ৬১ লাখ টাকায়। নিলামকারী বেনাপোলের নোভা এন্টারপ্রাইজ পণ্যচালানটি ডেলিভারি নিতে গিয়ে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। নিলামকারী তাৎক্ষণিক বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। অন্যদিকে, খুলনার আমদানিকারক সান ওয়ার্ল্ড ট্রেড ভারতে থেকে ১৯ লাখ ৯১ হাজার তিনশ’ ২০ কেজি ব্রোকেন স্টোন আমদানি করেন। যা বন্দরের টিটিআইতে সংরক্ষণ করা হয়। যার কাস্টমস মেনিফেস্ট নম্বর-২৬৪১৩/১৭, ২৪৫১৬/১৩, ২৫৫৩৬/১০, ২৭৩০৮/৭।  পণ্য চালানটি কাস্টমস এর ডেপুটি কমিশনারের (আইআর এম) নেতৃত্ব ইনভেন্ট্রি করে ১৭ লাখ ৯১ হাজার তিনশ’ ২০ কেজি  কম পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দর কর্তৃপক্ষকে পত্র প্রদান করেছেন। যার নম্বর ৫ম/২০(০৮)এলসি/নিলাম/বেনা-২০২০ /৫৮৭৬(১-৮)।নিলামকারী বেনাপোলের নোভা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ আলী খান জানান, বন্দরে একটি শক্তিশালী চোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা সরাসরি রাজস্ব ফাঁকি ও শেড থেকে মালামাল চুরির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো। বন্দরে মোট ৪২টি শেড রয়েছে, যার প্রতিটি শেডে বহিরাগত ট্যান্ডেল বা চোর আছে। সংশিষ্ট সূত্র জানায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ২০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। এসব পণ্য থেকে সরকার প্রায় ছয় হাজার কোটি টাক রাজস্ব আয় করে। বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ছয়শ’ ২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দু’ হাজার পাঁচশ’  আট কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার পাঁচশ’ নয় কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বন্দর সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, বন্দরের প্রতিটি গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বে থাকার পরও বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করছে। বন্দর একটি বন্ডেড কেপিআইভুক্ত এলাকা সত্বেও কীভাবে বন্দরে অবৈধ লোকজন প্রবেশ করছে, তা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষর কোন মাথাব্যথা নেই। বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চুরি হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। চুরি যাওয়া মালামালের কোনো ক্ষতিপুরণ দেন না বন্দর কর্তৃপক্ষ। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান বলেন, বন্দরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে কাস্টমস ও রেল কর্তৃপক্ষের রশি টানাটানি হচ্ছে। ফলে প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃস্টি হচ্ছে। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল বলেন, ‘বন্দর থেকে পণ্য চুরির অভিযোগ পাওয়ার পর বন্দরের উপপরিচালক মেহেদী হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে দু’ সপ্তার মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে’। বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, ‘বন্দরের অধিকাংশ সমস্যা আমরা বন্দরের বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে নিয়ে সমাধান করেছি। টিটিআই থেকে ব্রোকেন স্টোন ও এক নম্বর শেড থেকে উন্নতমানের মূল্যবান ফেব্রিকস চুরি গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি’।

আরও খবর

🔝