gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj

❒ খাদ্য সংকটে পরিবার নিয়ে দিশেহারা

কেশবপুরে লকডাউনে থমকে গেছে চর্মকারদের জীবিকা
প্রকাশ : শনিবার, ১৭ এপ্রিল , ২০২১, ১১:৫১:৩৪ এ এম
কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর):
thumbs
করোনাভাইরাসের কারণে কেশবপুরে লকডাউন চলমান থাকায় থমকে গেছে চর্মকারদের (মুচি) জীবন-জীবিকা। লকডাউনে লোকজন ঘর থেকে তেমন বের না হওয়ায় উপজেলার প্রায় অর্ধ শতাধিক চর্মকার কর্মহীন হয়ে পড়েছে। করোনা ভয়কে উপেক্ষা করে ফুটপাথে অন্যের জুতা সেলাই করতে বসলেও কাজ না থাকায় তাদের পরিবারে দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে এখনও কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় চর্মকাররা একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কেশবপুর শহরের ত্রিমোহিনী মোড়, থানার মোড়সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ফুটপাথে বসা চর্মকারদের সাথে কথা বললে উঠে এসেছে লকডাউনে তাদের দুঃখ ও দুর্দশার কথা।কেশবপুর শহরের থানার মোড়ের ফুটপাথে দীর্ঘদিন ধরে চর্মকার পেশার সাথে জড়িত বাজিতপুর গ্রামের ভবেন দাস (৬২) বলেন, পরিবারে তার সদস্য সংখ্যা ৩ জন। সকাল থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ তার কাছে জুতা সেলাই করতে আসেনি। টাকা আয় না হলে চাল কেনাও বন্ধ হয়ে যাবে। আলতাপোল গ্রামের স্বদেশ দাস (৪৫) বলেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ টাকা আয় হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে পরিবারের ৬ সদস্যের মুখে খাবার তোলা কষ্টকর। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের চর্মকার বিষ্ণুদাস জানান, লকডাউনের কারণে আয় না হওয়ায় স্ত্রী ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। বাজিতপুর গ্রামের চর্মকার নিতাই দাস (৫২) চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, ঘরে চাল নেই। এদিকে লকডাউনে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি কোন সহযোগিতাও জোটেনি এখনো। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।শহরের ত্রিমোহনী মোড়ের ফুটপাথে প্রায় ৫০ বছর ধরে অন্যের জুতা সেলাই করে আসছেন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের চর্মকার লক্ষী কান্ত দাস (৭৫)। তিনি জানান, এতো অভাব এর আগে কখনও হয়নি। গত লকডাউনে কিছু সহযোগিতা পেয়েছিলাম। এবার কেউ ফিরেও তাকায়নি। সংসারে ৭ জন সদস্য নিয়ে খাদ্য সংকটে ভুগছেন তিনি। লকডাউনের আগে জুতা সেলাই করে প্রতিদিন প্রায় ৩শ’ টাকা আয় ছিল। এখন ৫০ টাকাও আয় হচ্ছে না।আলতাপোল গ্রামের পূণ্য দাস, তাপস দাস, সবুজ দাস, বাজিতপুরের অমল দাসসহ আরও কয়েকজন চর্মকারের সাথে কথা হলে তারা জানান, দীর্ঘ বছর ধরে বাপ দাদার এ পেশাকে আকড়ে ধরে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের স্বল্প আয়েই এতদিন পরিবারের ভরণ পোষণসহ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছিলেন। তবে করোনার দ্বিতীয় ধাপে লকডাউনের কারণে আবারও থমকে গেছে তাদের জীবন-জীবিকা। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়কে উপেক্ষা করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধা নিবারণের লক্ষ্যে লকডাউনের মধ্যেও বসেছেন ফুটপাথে। তবে লকডাউনে আয় রোজগার একপ্রকার বন্ধ থাকায় এবং সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে এখনও পর্যন্ত কেউ কোন সহযোগিতা না কয়ায় তারা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

আরও খবর

🔝