gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
হেফাজতের আঁচড় -‘পূণ্যেই মুক্তি’
প্রকাশ : সোমবার, ৫ এপ্রিল , ২০২১, ০৭:১৮:১২ পিএম
কাজী বর্ণ উত্তম :
1617628960.jpg
হেফাজতের আঁচড় - সত্যিকার অর্থেই তারা রাষ্ট্রের মযার্দা চায় কি-না, সে বিষয়ে আমার মনে সন্দেহ আছ। বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চলছে, এটাও তারা চায় না। তারা চায় তালেবান ধরণের একটি রাষ্ট্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় অসহায় পিতামাতা তার সন্তানদেরকে দু'বেলা দুমুঠো ভাত আর পাশাপাশি দ্বীনের শিক্ষা যাতে পায় তার জন্য পাঠায় মাদ্রাসা গুলোতে। আমরা দেখছি সেই সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। সারা বিশ্বে প্রচারণা আছে মুসলমানদের একাংশ উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীতে পরিনত হয়েছে। আজ আপনারা যা করছেন তাতে সেই প্রচারণাকে জায়েজ করছেন। জায়েজ করছেন ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদের সমর্থকদের কর্মকান্ডকে। সুতরাং প্রশ্ন করা যেতেই পারে, ভিনদেশের মদদে এগুলো করছেন কি? গুজরাটের সংখ্যালঘু মুসলমানদের রক্তে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীর হাত লাল হয়েছিলো বলেই যুক্তরাষ্ট্র তাকে তাদের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। পরবর্তিতে নরেন্দ্র মোদী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন যুক্তরাষ্ট্র তখন সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। কারণ মোদী এখন আর ব্যক্তি মোদী নন, তিনি ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বিষয় ভাবতে হয়। অনেক রীতি নীতি মেনে চলতে হয়। এখানে আবেগের কোন স্থান নেই। নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের কাছে কোন ব্যক্তি নন। তিনি বাংলাদেশের প্রতিবেশি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী রাষ্ট্রের সরকার প্রধান।যারা নরেন্দ্র মোদী বিরোধী আন্দোলন উসকে দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালালেন এবং নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন তারা এখানে ইসলামের কী খেদমত করলেন তা বোধগম্য নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমনের বিরুদ্ধে যে কেউ প্রতিবাদ করতেই পারেন। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকার বাস্তবায়নে সন্ত্রাস, হামলা, ভাঙচুর, থানা-সরকারি অফিস আদালতে হামলা এবং অবুঝ মাদ্রাসা ছাত্রদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া এসব কোন অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না।ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব দেখলাম, দেখলাম আগুনে পোড়া বাড়ির সামনে বাবা-ছেলের কান্না। শাহাদৎ হোসেন শোভন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। শহরের সরকারপাড়ায় তার বাড়িতে স্লোগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ও গান পাউডার নিয়ে ঢুকে পরে। তাদের আগমন টের পেয়ে তার পরিবারের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন। সাজানো সংসারের সব কিছু মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়িয়ে জ্বালিয়ে দেয় হামলাকারীরা। আশপাশের মানুষ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে শুধু দেখছিলেন সে দৃশ্য। একদিন পর তার পরিবারের লোকজন এসে দেখেন ঘরের আসবাপত্র থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিছুই নেই। সব পুড়ে ছাই। শাহাদাৎ হোসেন ও তার বাবা ওয়ালিদ হোসেনের কান্নার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়াও হেফাজত কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের বাড়ি, ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন এবং আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাসেরের বাড়িতেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন ‘দিনভর হেফাজতের তাণ্ডব চলে-টার্গেট করে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তারা তার শ্বশুর বাড়িসহ তার অফিস পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। প্রাণ রক্ষার ভয়ে পরিবারসহ নিরাপদ জায়গায় থাকতে হয়েছে। তার জীবনের অর্জন করা সব স্মৃতি তারা পুড়িয়ে দিয়েছে।’এ যেন একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে রিহার্সাল। হেফাজতের সাথে সরকারের সমঝোতাই কাল হয়েছে বলে মনে করেন ১৪ দলের নেতারা। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বারবার বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা। তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত মন্তব্য করে এ বিষয়ে কঠোর হতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি ১৪ দলের নেতারা বলেন, হেফাজতের এ কর্মসূচি মোদিকে ঘিরে নয়, বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে তারা। কিন্তু এটি ঠেকাতে সরকার সক্রিয় হয়নি। ধর্মীয় সংগঠনগুলোর বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত যে সামনে বড় বিপদ ডেকে আনবে, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করেছেন ১৪ দলের নেতারা। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাসহ এ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন তারা। এ প্রসঙ্গে ১৪ দলের সমন্বয়ক জনাব আমির হোসেন আমু বলেন ‘মোদির বিষয়টি তারা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। এর আড়ালে তারা অপ্রকাশ্যভাবে দিবসগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। তারা সুযোগ পেলেই সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় গ্রহণ করে। এই সাম্প্রদায়িকতার স্লোগান পাকিস্তান থেকেই চলে আসছে। বারবার সাম্প্রদায়িকতার ওপর আশ্রয় নিয়ে দেশের ওপর আঘাত করতে চায় তারা। হেফাজতই হোক বা তাদের আড়ালে জামায়াত-শিবির কিংবা পাকিস্তানি শক্তি হোক, তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তি।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন ‘হেফাজতের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াতের লোক। মামুনুল হকের পিতা কে ছিল? তাদের অন্যরা কারা? আপোষ করে কখনো লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। রাজনীতিতে আজ যেটা শুরু হয়েছে, তা অশনি সংকেত। এটা বন্ধ করতে না পারলে, আমাদের সমস্ত শক্তি নিয়ে নামতে হবে, সনদ দেই আর যেভাবে যতই খুশি করার চেষ্টা করি, তারা কিন্তু তাদের রাজনৈতিক দর্শন থেকে সরবে না। তারা যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। তাদেরকে খুশি করার কোনো সুযোগ নেই। রাজনীতির লক্ষ্যে পৌঁছাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন ‘মোদির সফরকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে হেফাজত দাঁড়িয়ে গেছে। তারা রাষ্ট্রীয় উদযাপনকে চ্যালেঞ্জ করেছে। রাষ্ট্রীয় উদযাপনকে বিনা বাধায় যেতে দেবে না। তাদের ভবিষ্যৎ কী তা ভাবা দরকার। আগামী দিনে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে কি-না তা ভাবতে হবে। সমঝোতা কৌশলের নামে কখনো মিলেছি কখনো রাগ করেছি। আজকে হেফাজতের সঙ্গে কখনো মিলে যাওয়া, কখনো রাগান্বিত দেখা যাচ্ছে। আমরা মৌলবাদী রাষ্ট্র হবো- না কি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবো, সেটা ভাবতে হবে।’ জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন ‘দেশে একটি নারকীয় তাণ্ডবলীলা দেখলাম। এটা আমরা দেখতে চাই না। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে আমরা নির্মূল করতে পারিনি। হেফাজতের আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে প্রমাণ করেছে বিএনপি। এদের বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকার সুযোগ নেই। দৃঢ় হস্তে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের বিরুদ্ধে ১৪ দলকে কর্মসূচিতে দিতে হবে।’ধর্মকে ঢাল বানতে আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও একই ষড়যন্ত্র, একই ঢাল।১৯৭১ এর ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে ঘরে ঘরে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। অন্য দিকে জামাতসহ মৌলবাদীরা স্বাধীনতা বিরোধীরা ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরপরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুখোমুখি যুদ্ধ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধারা। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই যখন নিজেদের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে ব্যস্ত, তখনও ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতে মাঠে নেমেছে রাজনৈতিক ইসলামের তথাকথিত পীর-মাওলানারা। ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল, শুক্রবার, জুমার নামাজের পর পাঞ্জাবি-টুপি পরে শান্তি কমিটির ব্যানারে পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে রাজপথে মিছিল বের করেছিল এই উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীরা। ধর্মীয় আবেগ ব্যবহারের অংশ হিসেবে সেদিনও তারা বেছে নিয়েছিল পবিত্রজুমার দিন শুক্রবার কে। মিছিল শুরুর স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছিল বৃহত্তর মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটকে। সময়টাও ছিল ঠিক নামাজের পর। ইসলাম রক্ষার ছদ্মবেশে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে চেয়েছিল এই স্বাধীনতা বিরোধীরা। ধর্মব্যবসায়ীদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে এদের ধর্মব্যবসা থামেনি। এরা এখনও ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একই কায়দায় মানুষকে প্রতারিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যা জাতি হিসেবে আমাদেরকে লজ্জিত করে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে হেফাজত নেতা মামুনুল হক বলেন ‘২০১৩ সাল থেকে তো চেষ্টা করেছেন, হেফাজতে ইসলামকে মাইনাস করতে। আপনাদের কাছে টেলিভিশন এর পর্দা আছে, আমাদের কাছে সাড়ে ৩ লাখ মসজিদের মেম্বার আছে।’  সুতরাং দেশবাসীর ভাববার সময় এসেছে প্রতিটি মসজিদে এদের কে বয়কট করার। আগামীর বাংলাদেশের উন্নতির চ্যালেঞ্জই হল এই উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন ‘পুড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা মানে উন্নয়ন না চাওয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভূমি অফিসে দেড় থেকে দুইশ বছরের পুরোনো রেকর্ড ছিল, যা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আগামী ৫০ বছর এই ক্ষতির মাশুল দিতে হবে। তারা জনগণকে শিক্ষা দিতে চায়। কালেকটিভ পানিশমেন্ট দিতে চায়।’  হেফাজত তথা উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতিবাদ শুধু ভারতের মুসলমানদের জন্য কেন? অন্যদেশের মুসলমানদের জন্য কেন নয়? সৌদি আরবের শাসক বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ ও সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে কেন নয়? আরব বিশ্বে একক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার জন্য এবং ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য সৌদি আরব ইয়েমেন আগ্রাসন চালিয়েছে। বিবিসি রির্পোটে বলা হয়েছে ‘গত ছয় বছরে ধরে চলতে থাকা এই অসম যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।’ কেন চীনের বিরুদ্ধে নয়? চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমরা দীর্ঘদিন থেকে হত্যা এবং পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। চীনের বিরুদ্ধে শুধু হত্যা নয় এক মিলিয়ন উইঘুর মুসলিমকে আটক করার অভিযোগ উঠেছে। চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের জন্য যেসব ‘পুনঃশিক্ষণ’ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে – তাতে নারীরা পরিকল্পিত ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন,  বিবিসি।সুতরাং হেফাজতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়, বলাই যায় ধর্মকে বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সমস্ত স্কুল কলেজ যেখানে এখনো বন্ধ, সেখানে কি করে কওমি মাদ্রাসা খুলে রেখেছে? আমার এই লেখা টা লিখতে লিখতে খবর আসলো আবার সাতদিন লকডাউন। মাদ্রাসা গুলো বন্ধ হবে তো?  ২০২০ এর এপ্রিলে করোনা মহামারিতে যখন সারা পৃথিবীর মানুষ ঘরবন্দী এবং দিশেহারা এরকমই এক প্রেক্ষাপটে ১৯/০৪/২০২০ ‘পূণ্যেই মুক্তি’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখি। আজকের লেখা টা শেষ করি সেই কবিতা টি দিয়ে......‘হে সভ্যতা/ সুযোগ দিয়েছো চিৎকার করার/ চারিদিকে লাশের পর লাশ/ দুর্যোগ সংক্রমণে লাখো মানুষ,/ নিজ গৃহে বন্দী মানুষ/ তারপরও জেলখানা থেকে মুক্ত মন।/ হে লোভী মানবগোষ্ঠী/ আলো হারিয়ে অন্ধকারের মিছিলে/ বাছা পড়েছো যে ফাঁদে/ তোমার সভ্যতা ভয়াবহ দ্বন্দ্বে,/ স্বার্থবাদীদের খপ্পরে কল্যাণমূলক ভাবনা গুলো/ চলছে খেলা বন্টনের নিক্তি নিয়ে/ ফলাফল তো হতেই হবে হতাশাব্যঞ্জক।/ বিজ্ঞানের ব্যবহার বন্ধুর মত না করে/ করছো ধ্বংসের দামামা পিটানোর মতো।/ অস্ত্র তৈরি হচ্ছে এমনভাবে/ ধ্বসে পড়বে যাতে সবকিছু/ মুক্তি পাওয়া দুঃস্বপ্ন।/ বিপদ উপস্থিত মানুষের কাছ থেকে/ প্রকৃতির কাছ থেকে নয়/ এ প্রশ্ন উত্থাপিত। হে সভ্যতা/ এমনটি তো হওয়ারই কথা ছিল/ তুমি ধ্বংস করেছো সমাজতন্ত্র/ তুমি ধ্বংস করেছো কল্যাণমূলক রাষ্ট্র/ তুমি ধ্বংস করেছো ধর্মের গুণাবলি।/ তোমার স্বার্থে ভাগ হতে হয়েছে/ ধর্মে বর্ণে জাতিতে জাতিতে,/ কি করোনি তুমি/ আরব বসন্তের নামে ভেসেছে শিশুর লাশ,/ তেলের হিস্যা তোমার চাই/ ধ্বংস হয়েছে হাজার বছরের স্থাপত্য/ গৃহ হারা মানুষ ভাসছে পৃথিবী ময়।/  তোমার লালসায় পুড়ে মরে/ কাশ্মীর থেকে আফগানিস্তান/ উইঘুর থেকে হংকং/ ইয়েমেন থেকে সিরিয়া।হে সভ্যতা/ তোমার নারকীয় তাণ্ডবেই শরণার্থী শিবির/ রাখাইন থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার/ দক্ষিন সুদান থেকে উগান্ডার বিডি/  সোমালিয়ার থেকে কেনিয়ার দাবাব-কাকুমা,/ তাঞ্জানিয়ার- নায়ারুগুসু, ফিলিস্তিনের- জাবালিয়া/ জর্দানের-জাতারি, দক্ষিণ সুদানের- ইদা/ ওয়েস্টার্ন ইথিওপিয়ার-পাগনিডো,পাকিস্তানের-পানিয়ান/ শরণার্থী শিবিরে গৃহহীন মানুষের অভিশাপ/ তুমি বহন করছো হে সভ্যতা। হে সভ্যতা/ দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি/ মানব মননের আকাঙ্খা,/ বিদ্যার্জন আর জ্ঞান যে এক নয়/ পুণ্যই জ্ঞান, জ্ঞানই পুণ্য।/ প্রয়োজন হচ্ছে সত্য জ্ঞান/ যা শ্বাশত,/ শক্তি সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ নয়/ গুরুত্বপূর্ণ হলো পুণ্যের পথে শক্তিকে পরিচালিত করা।/ অফুরন্ত সম্ভাবনাময় এই পৃথিবী/ প্রয়োজন শুধু সমন্বয়ের/ ধৈয্য প্রজ্ঞা পুণ্যের।’# লেখক: সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ,  সহ সভাপতি উদীচী, যশোর।

আরও খবর

🔝