প্রকাশ : রবিবার, ৪ এপ্রিল , ২০২১, ০৩:৩৮:৩৩ পিএম
মাওলানা মামুনুল হক ইস্যুতে মহেশখালীতে গভীর রাতে হেফাজতের ব্যানারে হঠাৎ দফায় দফায় লাঠি মিছিল হয়েছে। মিছিল থেকে বিভিন্নস্থানে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া কালারমার ছড়ায় যুবলীগ নেতার বাড়িতে হামলা, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলারচেষ্টা, মহেশখালী আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং উপজেলা প্রশাসন ও থানা এলাকায় হামলা হয়েছে।এসময় পুলিশকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টাকালে হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছে একাধিক পুলিশ সদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলিও ছুঁড়েছে।এসব ঘটনায় রাতেই মহেশখালী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে প্রায় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তারেক রহমান জুয়েলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।হেফাজতের ব্যানারে মূলত জামায়াত-বিএনপির লোকজন এ তা-ব চালিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন।পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ‘অবরুদ্ধ’ হয়েছেন- এমন খবর মহেশখালী এসে পৌঁছালে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো মহেশখালীর বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ব্যানারে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। গ্রাম এলাকা থেকে খ- খ- মিছিল এসে বাজার এলাকায় জড়ো হয়। রাত ১২টার কিছু সময় পর একটি বিশাল লাঠি মিছিল বড় মহেশখালী থেকে উপজেলা সদরে আসে, মিছিলটি পৌর শহরের গোরকঘাটা বাজার থেকে সড়কের দু’পাশে ভাঙচুর চালিয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকায় যায়, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কাছের জানালা ভাঙচুর করে।এসময় মূল ফটক বন্ধ পেয়ে সরকারি কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে হেফাজত কর্মীরা। পরে মিছিলটি মহেশখালী থানার সামনে গিয়ে থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে ভাঙচুর চালায়। পরে মিছিলটি প্রধান সড়ক ধরে বড় মহেশখালী ফেরার পথে পালপাড়া এলাকায় সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন হিন্দু বাড়িতে হামলা চালায়।মিছিলকারীরা বড় মহেশখালী বাজারে পৌঁছে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজ মিয়া বাঁশির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা করে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়েও ব্যাপক তা-ব চালায়। এক পর্যায়ে তারা কার্যালয়টির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে।আসবাবপত্র বাইরে নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেয়।প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, কালারমার সড়কের দু’পাশে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফ্যাস্টুন ও বিলবোর্ড রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের হামলার মূল লক্ষ্য ছিলো এসব ছবি।সূত্র জানিয়েছে, রাত ১টার পর বিক্ষোভকারীরা সরে যায়। এ ঘটনার পরপরই বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়, জোরদার করা হয় পুলিশি টহলও। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ সময় বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে বড় মহেশখালী থেকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তারেক রহমান জুয়েলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।এ বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই বলেন, হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।মহেশখালী-কুতুবদিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে মহেশখালীতে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে। সমগ্র বিষয়টিকে কঠোরভাবে দেখছে পুলিশ।মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংষদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জানান, গভীর রাতে হঠাৎ করে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ভাবে দেখছেন। তিনি সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শও দেন।