gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
সাত বছরেও মেলেনি চৌগাছায় নিখোঁজ ৭ জনের খবর
প্রকাশ : শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২১, ০৮:৫৯:৪৯ পিএম
চৌগাছা (যশোর) অফিস:
1614351626.jpg
যশোরের চৌগাছায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে একই পরিবারের চারজনসহ নিখোঁজ সাতজনের সন্ধান সাত বছরেও মেলেনি। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে তারা আর ফিরে আসেনি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। দীর্ঘদিন অভিভাবকরা নিখোঁজ থাকায় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারগুলো। ভূক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মুক্তদাহ গ্রামের একই পরিবারে চারজন মালয়েশিয়া যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন আতিয়ার রহমানের ছেলে অমিত হাসান মুকুল (৩০), হায়দার আলীর ছেলে আজিজুর রহমান (৪০) এবং মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে ফুলজার হোসেন (৪৬), মৃত ছবেদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম খোকন (৪০)। এছাড়া, একই গ্রামের মৃত আত্তাব হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৭), রোস্তমপুর গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে রমজান আলী (৪৫) এবং দুর্গাবরকাটি গ্রামের উমসান আলীর ছেলে লিটন হোসেন (২৭) আজও নিখোঁজ।তারা সকলে ২০১৩ সালে ১ জুন মালায়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকে আর কারও খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, অল্প টাকায় মালয়েশিয়া যওয়ার প্রলোভনে পড়ে তারা আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়েন। মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা রাজু আহমেদ ওরফে ফজলুর রহমান তাদেরকে ফুসলিয়ে পানিপথে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১ জুন তারা বাড়ি থেকে একযোগে বের হন। কিন্তু তখনও পরিবারের সদস্যরা জানেন না তারা বিদেশের উদ্দেশ্যে বাড়ি ত্যাগ করছেন। জুন মাসের ১২ তারিখে অমিত হাসান মুকুল তার বাড়িতে ফোন করে জানান, ‘আমরা সকলেই পানি পথে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছি। ট্রলারে ওঠা হয়ে গেছে। এখনই রওনা দেবো’। ওটাই ছিল তাদের শেষ কথা।  মুকুলের স্ত্রী চামেলী খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যে নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিল সেই নম্বর বন্ধ পেয়েছি। বারবার চেষ্টা করেও ফোনে কাউকে পাওয়া যায়নি। এরপর সাতটি বছর কেটে গেলেও তার সন্ধান পাইনি। অতিকষ্টে দিন কাটে আমাদের’। নিখোঁজ শরিফুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী রেশমা বেগম, ফুলজার রহমানের স্ত্রী রূপভান বেগম হতাশ কণ্ঠে বলেন, বহু চেষ্টা করেও তাদের স্বজনদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারা এখন দারিদ্র্য আর কষ্টের মধ্যে বসবাস করছেন। এসময় তাদের চোখেমুখে ছিল উৎকণ্ঠা আর চরম হতাশা।ভূক্তভোগীরা জানান, নিখোঁজের তিন মাস পর তারা মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই আদম ব্যাপারি রাজুর কাছে যান। তাদের স্বজনদের ফিরে দিতে চাপ দিতে থাকেন। এসময় রাজু তার সহযোগী চট্টগ্রামের টেকনাফের অপর আদম ব্যাপারি রাশিদুল ইসলামের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেন। টেকনাফের দালাল রাশিদুল তাদেরকে জানান, কোনো সমস্যা নেই, তারা দু’ একের মধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে যাবে। পৌঁছানোর পর চুক্তি মোতাবেক দু’লাখ দশ হাজার করে টাকা দিতে হবে। কিছুদিন পরেই মুক্তদাহ গ্রামের ঘর জামাই দালাল রাজু তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে রাতের আঁধারে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে টেকনাফ ও মুক্তদাহ গ্রামের দালালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তাদের স্বজন এমনকী কোনো দালালের সন্ধান পায়নি ওই পরিবারগুলো। এ বিষয়ে নিখোঁজ মুকুলের পিতা আতিয়ার জানান, ‘আমরা ঘটনার প্রথম দিকে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ছুটাছুটি করেছি। কিন্তু আদম ব্যাপারিদের কোন সন্ধান পাইনি। আমাদের গ্রামের পাঁচজন, রুস্তমপুর গ্রামের একজন, দুর্গাবরকাটি গ্রামের একজনসহ ঝিকরগাছা উপজেলার আরও আটজন এই দালালদের খপ্পরে পড়ে পানি পথে মালয়েশিয়ায় রওনা দেন। কিন্তু সাত বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত কারও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি’। বর্তমানে এ সকল পরিবারে সীমাহীন দরিদ্রতা নেমে এসেছে। অভাব আর দারিদ্র্যের সাথে তারা যুদ্ধ করছেন। অনেকের স্ত্রী এখন গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। নিখোঁজ আজিজুর রহমানের স্ত্রী দু’টি সন্তান ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন। দাদির কাছে থেকেই তারা অতিকষ্টে জীবন পার করছেন। তারা এও জানেন না পরিবারের লোকজন বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। বেঁচে না থাকলে তাদের লাশ কোথায়? আর বেঁচে থাকলে তারা কোথায় আছেন। নিশ্চিত তথ্যটি পেতে অধীর অপেক্ষায় দিনগোনে ভূক্তভোগী পরিবারগুলো। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের ফিরে পাওয়া বা তাদের খবর পেতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে ভূক্তভোগী পরিবারগুলো।

আরও খবর

🔝