gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
বিলুপ্তপ্রায় পেশা ঘোলওয়ালা
প্রকাশ : শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২১, ০৩:৫৪:১৫ পিএম
পাবনা প্রতিনিধি::
1614333654.jpg
‘দই, দই...লাগে...দই...’ গ্রাম-গঞ্জে সময়-অসময়ে এখন আর ঘোষদের এমন হাঁক কানে বাজে না। মেঠো পথ ধরে কাঁধে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দইওয়ালাদের শশব্যস্ত চলনও আর দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া একটি পেশা হলো ঘোষ বা ঘোলওয়ালা। দুধ দিয়ে তৈরি নানা ধরনের খাবার ফেরি করে বেড়াতেন তারা। দামে সস্তা হলেও পুষ্টিগুণ আর স্বাদে এই গ্রামীণ খাদ্যপণ্য ছিল অনন্য।ঘোলওয়ালা পেশাটি বিলুপ্তির বড় কারণগুলোর মধ্যে- দুধের উচ্চমূল্য, নতুন ধরনের মিষ্টান্ন ও দোকানের আবির্ভাব, লাভ কমে যাওয়া, ঘোষদের দেশত্যাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।তাই এখন আর অলস দুপুর কিংবা গ্রীষ্মের দাবদাহে ঘোলওয়ালাদের হাঁকডাকও কানে ভাসে না। দীর্ঘকাল ধরে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে বিখ্যাত পাবনা অঞ্চল। জেলার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি এবং বেড়া উপজেলার রাকশা বাজার এখনও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কোনোমতে।বেড়ার সোনাপদ্মা গ্রামের ব্যবসায়ী চন্দন দত্ত জানান, রাকশা বাজারের দুগ্ধজাত পণ্যের ইতিহাস শতাব্দী প্রাচীন। এ এলাকার মঙলা ঘোষের ঘোল ছিল বিখ্যাত। গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি ঘোল বিক্রি করতেন। তার উত্তরসূরি নিতাই ঘোষ, গৌতম ঘোষ এবং সুকুমার ঘোষরাও ঘোল বিক্রি করতেন ফেরি করে। কিন্তু বর্তমানে শুধু নিতাই ঘোষই রাকশা বাজারে বসে ঘোল বিক্রি করেন। তার হাত ধরেই রাকশার ঘোলের ঐতিহ্য নিভু নিভু কায়দায় টিকে আছে।নিতাই ঘোষ জানান, গরমের মৌসুম এবং রমজান মাসে ঘোলের চাহিদা বেশি থাকে। তবে তিনি এখন কেবল প্রতি বছর রোজায় গ্রামে গ্রামে ঘোল নিয়ে বের হন। প্রতি গ্লাস ৫, ১০ এবং ২০ টাকা (স্পেশাল) দরে তার ঘোল বিক্রি হয়।সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দির ষাটোর্ধ পরিমল ঘোষের ভাষায়, ঘোল হলো ‘দইয়ের দরিদ্র চাচাতো ভাই’। এখনও পাবনা এলাকা থেকে একেবারে হারিয়ে যায়নি এই খাবারটি। মূলতঃ ছানা ও ঘি তৈরির উপজাত হলো ঘোল। তাই বাজার দরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়েনি এই খাবারটির দাম। এখনও ৫ টাকায় এক গ্লাস ঘোল পাওয়া যায়। ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদার কারণেই টিকে আছে সাগরকান্দির ঐতিহ্যবাহী লাল ঘোল। গ্লাসে ছাড়াও পাইকারি ও খুচরা হিসেবেও বিক্রি হয়।সাগরকান্দির জীবন ঘোষ জানান, তাদের কাছ থেকে পাইকারি দরে কিনে নিয়ে এখনও দু-একজন গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বা হাটে বসে বিক্রি করেন। চৈতালি ফসল ওঠার সময় গরমে, ধান তোলার মৌসুমে এবং সাধারণত গ্রীষ্মকালে বিক্রি বাড়ে। সাগরকান্দির লাল ঘোলের চাহিদা আগে আরও বেশি ছিল।স্মৃতিচারণ করে বাদল ঘোষ বলেন, এই তো দুই যুগ আগেও এ অঞ্চলের দোকানপাটে হালখাতা হলেই ক্রেতাদের লাল ঘোল দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। সময় বদলেছে। এখন ঘোলের বদলে অন্যান্য মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘোলেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। ঘোলের রং এখন সাদা করে বিক্রির প্রচলন হয়েছে।পাবনার গ্রামীণ অঞ্চল নিয়ে গবেষণাকারী ড. আশরাফ পিন্টু জাগো নিউজকে বলেন, পাবনার কোথাও এখন ঘোল উৎসব হয় না। ঘোলই তৈরি হয় দু-চারটি জায়গায়। তবে বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপ স্টেশনের পাশে প্রতি বছর ‘বৈশাখী ঘোল উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়।তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে সলপের স্যানাল জমিদারের সময় এখানকার ঘোষ সম্প্রদায়েরা উৎকৃষ্ট মানের ঘোল, দই ও ঘি তৈরি করতেন। এসব দুগ্ধজাত পণ্য কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। সলপের ঘোল গুণে-মানে সেরা বলে আজও খ্যাত। তবে কালের বিবর্তনে সে খ্যাতি হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতেই স্থানীয় কিছু উদ্যোগী মানুষ বৈশাখ মাসে ঘোল উৎসবের আয়োজন করেন।

আরও খবর

🔝