gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
মুক্তির পর বিপুকে হাসপাতালে ভর্তি (ভিডিও)

❒ বাড়ি ভাংচুরে এসপির কাছে নেতৃবৃন্দ

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি , ২০২১, ১১:১১:১১ পিএম
বিশেষ প্রতিনিধি:
1610471646.jpg
পুলিশ সদস্যের সাথে অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর যশোর শহর আওয়ামী লীগ সম্পাদক এস এম মাহমুদ হাসান বিপুকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। তবে আটকের পর সোমবার মধ্যরাতে শাহীন চাকলাদার সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাংচুর ও তাণ্ডব চলেছে। মাহমুদ হাসান বিপুকে আটক ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।   গোটা শহর জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার রেখেছে পুলিশ। আটক বিপুকে গতকাল দুপুরে জিম্মায় মুক্তি দেয়ার পর বিকেলে পরিবারের পক্ষে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এদিকে, দু’নেতার বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় বিকেলে আওয়ামী লীগের পক্ষে পুলিশ সুপারের সাথে মত বিনিময় করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরের কমপক্ষে ৫০ টি স্পটে সতর্কাবস্থায় ছিল পুলিশ। অনাকাঙ্খিত একটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ওই মামলায় দু’জনকে আদালতে চালান দিয়েছে। ১২ জানুয়ারি দুপুর দু’টোর পর যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ ও শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদের জিম্মায় কোতোয়ালি থানা থেকে বিপুকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি থানা থেকে সরাসরি দলের জেলা কার্যালয়ে যান। সেখানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। বিপু বলেন, একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার সুষ্ঠু মিমাংসা করতে গিয়েছিলেন তিনি। পরিস্থিতি যাতে খারাপের দিকে না যায় সে চেষ্টাই তিনি করেছিলেন। কিন্তু, ভুল বোঝাবুঝির কারণে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। তিনি জানান, তার ব্যাপারে জেলাব্যাপী দলের নেতাকর্মীরা যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে তিনি অবিভূত। এটা তিনি কোনোদিনই ভুলবেন না। বক্তৃতার এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন বিপু। জিম্মায় নেয়ার পর মোহিত কুমার নাথ ও মীর জহুরুল ইসলাম জানান, মাহমুদ হাসান বিপুর শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। তবে বিকেল ৫ টার দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে বিপুকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের খাতায় ‘হিস্ট্রি অব অ্যাসাল্ট’ হিসেবে ভর্তি দেখানো হয়েছে।এদিকে, বিপুসহ কয়েকজন আটকের পর ওই একইদিন গভীর রাতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব বাড়িগুলোতে ব্যাপক ভাংচুর করা ছাড়াও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এসময় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যশোর পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, রাত পৌনে দু’টোর দিকে তার বাড়িতে হামলা হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সংঘবদ্ধ একদল ব্যক্তি ‘ধর ধর’ করে তার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় ইট দিয়ে বাড়ির দু’তলার ঘরের জানালা ভাংচুর করা ছাড়াও গেটে একের পর এক আঘাত করা হয়। এসময় আশপাশ থেকে মানুষজন বেরিয়ে আসলে তাদেরকে নিবৃত করে হামলাকারীরা।গোলাম মোস্তফা এ ঘটনাকে নারকীয় অভিহিত করে বলেন, ‘এটাতো কোনো অসভ্য দেশ না। রাতের আঁধারে একজন জনপ্রতিনিধির বাড়িতে ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। যেভাবে গালিগালাজ আর ভাংচুর করা হয়েছে তা অবর্ণনীয়’। তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।যশোর জেলা যুবলীগের সদস্য মুনসুর আলী অভিযোগ করেন, তার উপশহর সি ব্লকের বাড়িতে মঙ্গলবার রাত ২টা ১৮ মিনিটে হামলা হয়। হামলাকারীরা তার বাড়ির জানালার গ্লাস ভাংচুর করা ছাড়াও সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করেছে। হামলাকারীরা সংঘবদ্ধ থাকলেও তারা কারা ছিল তা তিনি বলেননি।মুনসুর আলীর বাড়ি হামলার পরপরই উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটুর বাড়ি এবং যুবলীগ নেতা সোহাগের ঘোপের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন তারা। সোহাগের বাড়িতে ঘরের জানালা ভাংচুর করা হলেও চেয়ারম্যান লিটুর বাড়িতে যেয়ে গালিগালাজ করে চলে আসে হামলাকারীরা।যশোর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক অভিযোগ করেন, একইদিন গভীর রাতে তার বাড়িতেও হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা এক ভাড়াটিয়ার বাড়ি ভাংচুর করেছে বলেও তিনি জানান।এদিকে, নেতাদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ১২ জানুয়ারি বিকেলে যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের সাথে মতবিনিময় করেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।  এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল খালেক, একেএম খয়রাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আফজাল হোসেন, মীর জহুরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু প্রমূখ। নেতৃবৃন্দ হামলা ও ভাংচুরকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এসপির কাছে। এসময় এসপি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে।  মাহমুদ হাসান বিপুর সাথে পুলিশ সদস্যের অনাকাঙ্খিত ঘটনা, মধ্যরাতে দু’নেতার বাড়ি ভাংচুরে অসন্তোষের ঘটনায় গোটা শহর জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। ১১ জানুয়ারি রাত থেকে ১২ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত সতর্কাবস্থানে ছিল পুলিশ। শহরের ব্যস্ত মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকে নজরদারি ছিল পুলিশের। আরো কয়েকদিন পিকেট ডিউটি জোরদার থাকবে বলে থানা সূত্রের দাবি।  এদিকে বিপু আটক, কয়েক নেতার বাড়ি ভাংচুর ও পরবর্তী কয়েকটি ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের কয়েকজন সিনিয়র অফিসারের সাথে বার বার ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। থানার কয়েক কর্মকর্তার সাথে কথা বলা গেলেও তারা ঘটনার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। তারা বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে ওই সব ঘটনায় কয়েকটি মামলা ও জিডির প্রস্তুতি চলছে বলে গত রাতে থানার একটি সূত্রের দাবি। একটি মামলায় দু’জনকে চালান দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। চালান দেয়া দুজন হচ্ছে যশোর এইচ এমএম রোডের আব্দুস সাত্তারের ছেলে শামীমুজ্জামান তপু ও কিসমত নওয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে ইসলামুল হক।

আরও খবর

🔝