gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
আসমার নির্যাতনের শিকার পরিবারের সকল বধূ (ভিডিও)

❒ ফলোআপ: ঘুনী গ্রামে গৃহবধূ নাসরিনের ওপর বর্বরতা

প্রকাশ : রবিবার, ১০ জানুয়ারি , ২০২১, ১১:৫২:৫৯ পিএম
কাগজ সংবাদ:
1610301236.jpg
যশোর সদর উপজেলার ঘুনী গ্রামের শাখারীপাড়ায় গৃহবধূ নাসরিনের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। আসমা শুধু নাসরিনের ওপর এ ধরণের বর্বরতা দেখাননি, ওই পরিবারের প্রতিটি বধূই তার নির্যাতনের তেতোস্বাধ গ্রহণ করেছেন। মেয়ের মতো পিতা জাফর ব্যাপারিও একজন প্রতারক হিসেবে এলাকায় পরিচিত।  এলাকাবাসী ও ওই পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জাফর ব্যাপারিরা চারভাই। তিনি সবার বড়। নির্যাতনের শিকার পুত্রবধূ নাসরিনের পিতা নুর ইসলাম ব্যাপারি মেঝো, আব্দুর রহিম ব্যাপারি সেজো এবং রফিকুল ইসলাম ব্যাপারি ছোট। নাসরিনের পিতা মারা যাওয়ার ২০ দিন পর নিজের ছোট ছেলে ফিরোজ ব্যাপারির সাথে নাসরিনকে বিয়ে দেন। পরের দিনই দুবাই চলে যান ফিরোজ। প্রায় আড়াই বছর ফিরোজ আর দেশে ফেরেনি। এমনকী স্ত্রীর সাথেও তার কোনো যোগাযোগ নেই। সকল টাকা তিনি পাঠাতেন আসমা ও তার পিতার নামে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নিজের অপকর্ম ঢাকতে মেজভাইয়ের বউ সাদিয়া খাতুনকে কৌশলে লেবানন পাঠিয়ে ভাইকে আর একটা বিয়ে দেন আসমা। এর আগে সাদিয়ার বাড়িতে একটি তালাকনামা পাঠানো হয়। সেজভাইয়ের বউ জোহরা আসমার নিপীড়ন সইতে না পেরে নিজেই স্বামীকে তালাক দিয়ে চলে গেছেন। লেবানন প্রবাসী সাদিয়া আক্তার ভিডিও কলে গ্রামের কাগজকে জানান, ননদ আসমার অনৈতিক কর্মকান্ড জেনে যাওয়ায় ষড়যন্ত্র করে আসমা তাকে লেবানন পাঠিয়ে দেন। পরে তার পিতার বাড়িতে তালাকনামা পাঠিয়ে ওই ভাইকে আর এক জায়গায় বিয়ে দেন আসমা। প্রবাস জীবনের চার বছরের মধ্যে আট বছর বয়সী ছেলে জোবায়েরের সাথেও তাকে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। সাদিয়া বলেন, ‘আমার বাপের বাড়ি থেকে আনা এবং কষ্ট করে বানানো সব কিছু আত্মসাৎ করে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র তালাকের কপি’। আসমা আক্তারের আপন সেজচাচা আব্দুর রহমান ব্যাপারির মেয়ে সাথী খাতুন জানান, তার বড়চাচা জাফর ব্যাপারির চক্রান্তে তার বাবা বাড়িছাড়া। ২৩৩ নং ঘুনি মৌজার আরএস ১৫০৪ খতিয়ানের ১৮২৩ দাগের মোট ৪৬ শতক জমির মধ্যে ১১ দশমিক ৫০ শতক জমির মালিক ছিলেন তার বাবা। ২০০২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ১৭৬০ কবলা দলিলে রেজিস্ট্রি করে নেন জাফর ব্যাপারি। কিন্তু, জমি লিখে নেয়ার পর একটি টাকাও দেয়া হয়নি তার বাবাকে। উপরন্তু, টাকা চায়লে মামলার ভয় দেখিয়ে এলাকাছাড়া করেন জাফর। কিন্তু, ওই জমি কেনার জন্য তিনি বড়ছেলে সৌদি প্রবাসী সাদিকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সাদিকের টাকায় সেই জমিতে বাড়িও হয়। জমিটি জাফর ব্যাপারি পরে আসমার নামে হেবা করে দেন। আর সাদিকের স্ত্রী জেসমিনকে দু’সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দেন। জেসমিন তার ওপর সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিকার পেতে বসুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবু বক্কার খানের উপস্থিতিতে ২০১৩ সালের ১৪ জুন গ্রাম আদালতে জাফর ব্যাপারি বড়ছেলে সাদিক ব্যাপারিকে ছয় শতক জমি ও এক লাখ টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তা তিনি মানেন না। জেসমিন ইউনিয়ন পরিষদে ফের একটি অভিযোগ দায়ের করলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিষয়টির অনুসন্ধান করে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু, ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সিদ্ধান্ত জাফর ব্যাপারি না মানায় তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান। বসুন্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম খান বলেন, ‘জাফর ব্যাপারি ও তার মেয়ে আসমার কর্মকান্ড নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। জমি ও বাড়ির বিষয়ে বসুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের দু’বার দেয়া সিদ্ধান্ত তারা মানেনি। সবশেষ নাসরিনের ওপর নির্যাতনের বিষয়েও আমার সাথে যোগাযোগ করে। যেহেতু তারা স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিস্পত্তির সিদ্ধান্ত মানে না তাই প্রচলিত আইনের মাধ্যমে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি’।

আরও খবর

🔝