করোনা ভাইরাসের টিকা রপ্তানির বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে করা চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি টিকা প্রাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।আর স্বাস্থ্য সেবা সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি সাপেক্ষে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ দেশে টিকা চলে আসবে বলে তারা আশা করছেন।সোমবার সচিবালয়ে করোনাভাইরাস টিকা সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী ও সচিব এ বিষয়ে কথা বলেন।ভারতের ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা রোববার ওই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিলে বাংলাদেশেও দ্রুত টিকা পাওয়ার আশা জোরালো হয়ে ওঠে। কারণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলে আসছিলেন, ভারত অনুমোদন দিলে জানুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম চালান পেয়ে যাবে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাঠাবে সেরাম ইনস্টিটিউট।কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালার বরাত দিয়ে রোববার রাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রপ্তানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবে। তার ওই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের টিকা পাওয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়। এর ফলে বাংলাদেশের টিকা পাওয়া পিছিয়ে যাবে কিনা- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে সকাল থেকে কাজ করছি। বেক্সিমকো, ফরেন মিনিস্ট্রি ও ভারতের মিশনের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি ব্যাহত হবে না। কোনো সমস্যা হবে না, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’ভারত থেকে টিকা এনে বাংলাদেশে সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ তারা।বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী, টিকা বাংলাদেশে অনুমোদন পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে আমরা প্রথম লটের টিকা পাব।’ টিকার জন্য চুক্তির অনুযায়ী খুব দ্রুত ১২ কোটি ডলার পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং মঙ্গলবারের মধ্যে সেই টাকা জমা হয়ে যাবে বলেও জানান মন্ত্রী।বাংলাদেশে কবে নাগাদ টিকার প্রথম চালান আসতে পারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি দেখা হচ্ছে, কারণ এ সমস্যাটা গতকালও ছিল না। এখনই এ বিষয়টি বলা যাচ্ছে না, দুই চার দিনের মধ্যে জানাতে পারব। রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের টিকার বিষয়ে আলোচনা চলমান আছে, তবে তাদের এখনো ট্রায়াল শেষ হয়নি। ট্রায়াল শেষ না হলে তো চুক্তি করা যাবে না। চীনের সাথে আলোচনা হয়েছে, তাদের কাছে বিস্তারিত কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।’টিকা নিয়ে ‘আশঙ্কার কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করে সচিব বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া ভারত সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। এ অনুমোদন পাওয়ার পর তারা ডব্লিউএইচওর কাছে অনুমোদনের জন্য যাবে, সেখানে তিন সপ্তারের মত সময় লাগবে। আমাদের সময় বলা ছিল ফেব্রুয়ারিতে পাব। এ তিন সপ্তাহ পর, অর্থাৎ ডিলে হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। দুঃচিন্তা হওয়ার মত এখনো কিছু হয়নি। টাকা পাঠানোর বিষয়টি আজই চূড়ান্ত হয়ে গেছে এবং পাঠানো হচ্ছে।’