gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষ
প্রকাশ : বুধবার, ১৮ জানুয়ারি , ২০১৭, ০৮:৪৩:৫৬ পিএম
কাগজ ডেস্ক ::
1484750701.jpg
বিএনপিসহ ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বুধবার বলেন, রাষ্ট্রপতির আলোচনা শেষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেসব মতামত ও প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে এই নির্বাচন কমিশন হবে। এ বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কমিশন নিয়োগ দেবেন। কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন সাড়ে চার দশকেও না হওয়ায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠনে জটিলতা দেখা দেয়। গতবার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠনের উদ্েযাগ নিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত ওই সার্চ কমিটি সিইসি পদের জন্য দুজন এবং নির্বাচন কমিশনার পদে আট জনের নাম প্রস্তাব করে। তাদের মধ্য থেকে সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন জিল্লুর রহমান। ওই কমিশনের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এবারও একইভাবে সংলাপের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর এ আলোচনা শুরু হয়। এরপর গত এক মাসে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ মোট ৩১টি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসেছেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলো হল- লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (এলডিপি), কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যশনালিস্ট ফ্রণ্ট (বিএনএফ), ইসলামি ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সাম্যবাদী দল, বিকল্প ধারা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাসদ (আম্বিয়া), বাসদ, ইসলামি আন্দোলন, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, গণফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও জাকের পার্টি। নির্বাচন কমিশন গঠনে এ সংসদেরই আইন প্রণয়ন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি এবং দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠনসহ বিভিন্ন পরামর্শ এসেছে দলগুলোর পক্ষ থেকে। সব দলের প্রস্তাব বিবেচনা করে ইসি গঠন: সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মতামত ও প্রস্তাব এসেছে, তা বিবেচনা করে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নতুন ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের শেষ দিনে এই আশাবাদ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান; তবে কী প্রক্রিয়ায় নতুন ইসি গঠন হবে, তা জানাননি তিনি। শেষ দিনে বুধবার বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও জাকের পার্টির সঙ্গে আলোচনা করেন মো. আবদুল হামিদ। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠনে অনেক সুচিন্তিত প্রস্তাব এবং মতামত দিয়েছেন। তিনি (রাষ্ট্রপতি) আশা প্রকাশ করেন, এসব প্রস্তাব ও মতামত বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব ও মতামত শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে। দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সব রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বানও রাষ্ট্রপতি রেখেছেন বলে প্রেস সচিব জানান। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামি ফেব্রুয়ারি মাসে বিদায় নিতে যাওয়ায় গত বারের মতো এবারও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে নতুন ইসি গঠনের উদ্েযাগ নেন রাষ্ট্রপতি। কাজী রকিবউদ্দীন নেতৃত্বাধীন ইসি গঠনের আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান একটি সার্চ কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশের মধ্য থেকে পাঁচজনকে নিয়ে ইসি গঠন করেন। এবারও একই প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কথায় আভাস মিলেছে; যদিও বঙ্গভবন থেকে এখনও সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বেশিরভাগ দল সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে, তা না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটির পক্ষেই মত দিয়েছে বেশিরভাগ দল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, ইসি গঠনে সম্ভব হলে এখনই আইন প্রণয়ন কিংবা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে; তবে তাদের এই উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক তারা চান না, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চান তারা। তবে তাদের আন্তরিকতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে বিএনপির। বিএনপি সাবেক একজন প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্েযর সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই আশা প্রকাশ করেছে, রাষ্ট্রপতি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। সংলাপে আবদুল হামিদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে সংলাপ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলগুলোর সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি। জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য প্রতিষ্ঠার গুরুত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আবদুল হামিদ। রাজনৈতিক দলগুলোর পরমত সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি চর্চার উপরও জোর দিয়েছেন তিনি। এর আগে, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সলের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় তারা আশা প্রকাশ করেন সংবিধান অনুযায়ী একটি গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির চলমান উদ্যোগ সফল হবে। প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, জাকের পার্টি সব নিবন্ধিত দলের থেকে একজন করে প্রতিনিধি সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এদিকে, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এ.এ মান্নান নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, ইসলামী ফ্রন্টের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন গঠনে ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন। তারা বলেন, স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে। তারা নির্বাচন কমিশনের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠন এবং কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা প্রদানের প্রস্তাব করেন। ইসলামী ফ্রন্ট আশা করেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, যার মাধ্যমে আগামি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল আলোচনায় বসেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে; প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলের সভাপতি এ এই এম কামরুজ্জামান খান। মুসলিম লীগ নেতারা বলেন, দেশের উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দৃঢ় মনোবৃত্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয় মুসলিম লীগ। ইসিতে একজন নারী কমিশনার রাখারও প্রস্তাব দেয় তারা।

আরও খবর

🔝