gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
রজব মাসে মধ্যপন্থা অবলম্বন
প্রকাশ : শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ০৮:৫৫:০০ পিএম
এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ:
GK_2024-02-03_65be54605be44.png

মহিমান্বিত রমাযান মাসের আগমনের পূর্বে আমাদের সামনে রয়েছে রজব ও শা’বান মাস। সে প্রেক্ষিতে আমরা রজব মাসের পালনীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে কিছু আলোকপাত করবো।

রজব মাস

রজবের শাব্দিক অর্থ সম্মান। জাহেলী যুগে মানুষ এ মাসকে সম্মান করতো বলে এর নামকরণ হয়েছে রজব। (আস-সিহাহ ফিল-লুগাহ ১/২৪৩)

রজব মাসের ঐতিহাসিক একটি বিশিষ্টতা ও পটভূমি রয়েছে। রজব ‘আশহুরে হুরুম’ অন্তর্গত একটি অন্যতম সম্মানিত মাস। আরবের পৌত্তলিকরা এ মাসকে কেন্দ্র করে পশু বলিসহ নানা রকম কুসংস্কৃতি চর্চায় বুঁদ হয়ে থাকত। তারা এ মাসের মর্যাদা চর্চায় প্রান্তিকতা ও গোঁড়ামির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতো। এমন কি রজব মাস উদযাপনে তারা যুদ্ধ বিগ্রহ আর রক্তপাতের মতো অতি আবশ্যক ব্রতটিকেও ‘সাজঘরে’ পাঠিয়ে দিতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস কেন্দ্রিক এ জাতীয় নষ্ট কালচারের আমূল সংস্কার সাধন করেন।

কিন্তু আক্ষেপের কথা হল, আজকের মুসলিম সমাজে রজব মাস কেন্দ্রিক সে নষ্ট আচার-আনুষ্ঠাকিতা দীনী শিরোনামে নব অবয়বে চর্চিত হচ্ছে। নিম্নে রজব মাস কেন্দ্রিক এসব রসম-রেওয়াজের কিছু ফিরিস্তি ‘বর্জনীয় বিষয়’ শিরোনামে তুলে ধরা হলো।

বর্জনীয় বিষয়

(১) সালাতুর রাগায়েব : এটি ‘লাইলাতুর রাগায়েব’ তথা রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের বিশেষ নিয়মের নামায; যা মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বিশেষ নিয়মে আদায় করা হয়। এর বিনিময়ে পূণ্য-নেকীর ফল্গুধারা প্রাপ্তির সরল বর্ণনা এসেছে। এটি একটি জাল বর্ণনা। আল্লাম আবু বকর মুহাম্মদ তুরতূশী রহ. বলেন, ৪৮০ হিজরীর পরবর্তী যুগে বাইতুল মাকদিসে এ জাতীয় সালাতের উদ্ভব হয়েছে। এর আগে এসবের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এরপর এখান থেকে অন্যান্য অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব ঘটে। এটি একটি ঘৃণিত বিদআত। (ইমাম শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমু‘আহ ১/৪৮, ইমাম যাহাবী, তালখীসু কিতাবিল মাউযুআত ১/১০৭)

(২) ‘শবে এস্তেফতাহ’ এর নামায : ১৪ রজব দিবাগত রাতে বিশেষ নিয়মে চার বা পঞ্চাশ রাকাত নামায আদায়োত্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ দুরূদ, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল আদায় করে এস্তেফতাহের এ নামায আদায় করা হয়। এ নামাযের বিনিময়েও পূণ্য-মার্জনা প্রাপ্তির ফুলঝুরি দেখানো হয়েছে। এটিও একটি জাল বর্ণনা। (আব্দুল হাই লক্ষনৌবী, আল-আসারুল মারফুআহ ফিল আখবারিল মাওযুআহ ১/১১২)

(৩) সালাতে ওয়াইস কারনী : ৩, ৪ অথবা ৫ রজবের প্রথম প্রহরে সীমাহীন সাধনাযোগে বিশেষ নিয়মে ছয় রাকাত নামায আদায়ের মাধ্যমে এ নামায আদায় করা হয়। এটিও একটি জাল বর্ণনা। (আল-আসারুল মারফুআহ ফিল আখবারিল মাওযুআহ ১/১১১)

এছাড়া রজবের প্রথম রাত্রিতে বিশেষ নিয়মের বিশ বা চল্লিশ রাকাত নামায, ১৪ রজবের দিবাগত রাত্রিতে চৌদ্দ রাকাত নামায, ২৬ রজব দিবাগত রাতের ১২ রাকাত নামায, এ মাসে আয়াতুল কুরসী এবং একশত বার সূরা ইখলাস পাঠ সম্বলিত বিশেষ নিয়মের চার রাকাত নামায, এ মাসের শেষ জুমু‘আয় পঠিত বিশেষ নিয়মের বার রাকাত নামায এবং এ মাসের শেষ তারিখের দিবাগত রাতের বিশেষ নিয়মের বার রাকাত নামায এসবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বর্ণনা আশ্রিত নামাযের বিবরণ।

ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, আব্দুল কাদের জিলানী রহ. এর নামে প্রচলিত গুনইয়াতুত তালিবীন, বাংলা মোকসেদুল মোমেনীন, নেয়ামুল কুরআন, আমালুল কুরআন, বার চান্দের আমল প্রভৃতি পুস্তিকায় চটকদার জাল (ভিত্তিহীন) হাদীসের ভাষায় সালাতুর রাগায়েবসহ এজাতীয় নামাযের বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। বর্ণনাগুলো মিথ্যা এবং বানোয়াট। মানব রচিত এ জাতীয় ‘হাদীসের’ ওপর আমল করার কোনোই সুযোগ নেই। কষ্টসাধ্য এসব নামায আদায় করতে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যা আরোপের শাস্তি প্রাপ্তির প্রতিশ্রæতি অর্জন ব্যতিরেকে আর কিছুই লাভ হবে না।

(৪) রজব মাসের নির্দিষ্ট দিন-তারিখের রোযা : রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারের রোযা, মি’রাজের রোযা তথা ২৭ রজবের রোযা, এ মাসে এক থেকে পনেরটি রোযা পালন এবং প্রত্যেক সংখ্যক রোযার জন্য আলাদা আলাদা পূণ্য-মার্জনার সমাহার প্রদর্শন, তেমনিভাবে তিন, সাত, আট, পনের এবং পূর্ণ রজবের রোযার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাহাত্ম্যের বর্ণায়নসহ রজব মাসের বিভিন্ন দিন তারিখের রোযা সম্বলিত যেসব হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের নামে সমাজে বা বই-পুস্তকে প্রচলিত আছে তা সবই হাদীস শাস্ত্রবিদদের মতে ভিত্তিহীন। ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক - হা.নং ৭৮৫৪)

পালনীয় বিষয়

কুরআন-হাদীসের ভাষ্য মতে রজব একটি সম্মানিত মাস। তবে এ মাসে সুনির্দিষ্টভাবে পালন করার মতো কোনো বিষয় নেই। হাদীস ও আসারের বর্ণনায় এ মাসের সম্মান ও মর্যাদা বিবেচনায় যাবতীয় পাপাচার পরিহার করা এবং স্বাভাবিক ইবাদতে অধিক মনোযোগী হওয়ার কথা এসেছে।
তবে এ মাসের মর্যাদাকে পুঁজি করে ইবাদতের স্বাভাবিক গতিধারাকে ব্যাহত করার কোনো সুযোগ নেই।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিকের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।

আরও খবর

🔝