শিরোনাম |
❒ জমির দলিল আটকে জিম্মি করার প্রতিবাদ
যশোরে মক্কেল ও তার ছেলে এবং স্বামীকে মারপিট এবং জখমের অভিযোগ উঠেছে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা সম্পর্কে বাবা ও ছেলে।
অভিযোগ করা হচ্ছে, জমি সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করতে দুই আইনজীবী বাবা ও ছেলে মক্কেলের কাছ থেকে ৮৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। ঘুরিয়েছেন আট মাস। কিন্তু, কোনো কাজ করে দেননি। বাধ্য হয়ে দলিলপত্র ফেরত চান মক্কেল। বাবা-ছেলে জমির দলিল ফেরত না দিয়ে ওই নারী, তার ছেলে ও স্বামীকে নিজেদের বাড়িতে ডেকে মারপিট করে জখম করেছেন। শুধু তাই নয়, জমির দলিল ফেরত চাইলে খুন জখমেরও হুমকি দিয়েছেন তারা।
এসব অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আদালতপাড়ায় ঘুরছেন শহরের লোন অফিস পাড়ার গৃহবধূ শাহানারা খাতুন। জেলা আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা না কর্তৃপক্ষ। সমিতির বর্তমান কমিটির এক নেতা ওই দুই আইনজীবীর ঢাল হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগও দিয়েছেন ওই গৃহবধূ। সেখানেই ওই আইনজীবী নেতা হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শাহানারা পরিবার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তারা দ্রুত অভিযুক্ত আইনজীবী লতিফুর রহমান খোকন ও তার ছেলে মেহেদী হাসান বাপ্পির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
শাহানারা খাতুন জানান, আইনজীবী খোকন ও বাপ্পির কাছে আইনি সেবা নিতে গেলে তারা নানা আশ^াস দেন। একপর্যায়ে তাদের সাথে শর্ত অনুযায়ী কিছু চুক্তি হয়। পরে তারা আইনজীবী হিসেবে বাবা-ছেলেকে নিয়োগ দেন তিনি। এরপর তাদেরকে জমির মুল দলিলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি দেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী মামলার রায় তার পক্ষে আনার জন্য ৮৫ হাজার টাকাও দেয়া হয়। কিন্তু মামলা দায়ের করতেই বাবা ছেলে আট মাস পার করেন। একেক সময় একেক অজুহাত দিয়ে মামলা দায়ের করতেও ব্যর্থ হন। শেষমেষ তিনি ওপেন এজলাসেই বিচারকের স্মরণাপন্ন হন। বিচারক সেসময়ই মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। বাবা ছেলের কথা বার্তার সাথে মিল না থাকায় তিনি আইনজীবী পরিবর্তনের স্বিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনি দলিলসহ সকল কাগজপত্র ফেরত চান। এতেই বাধে যত বিপত্তি।
তিনি আরও জানান, গত ১৪ জানুয়ারি তিনি ও তার স্বামী সৈয়দ আফজাল হোসেন রিপন এবং ছেলে আলফাজ হোসেন ফাহিম ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের আইনজীবীর বাসভবনের নিচের তলার অফিসে যান। কিন্তু তারা দলিল ফেরত দেবেননা বলে জানান। এসময় প্রতিবাদ করতেই লতিফুর ও তার ছেলে বাপ্পি শাহানার ও তার ছেলে ফাহিমকে বেধরক মারপিট করেন। এসময় তার স্বামী এগিয়ে আসলে তাকেও মারপিট করে। এসময় দলিল ফেরত চাইলে তাদেরকে হত্যার হুমকিও দেয়। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাদেরকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
শাহানারার ছেলে ফাহিম বলেন, সাত-আটদিন আগে তারা আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। সরাসরি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথেও দেখা করেছেন। কেউই তাদের বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেননি। তারা ওই দুই আইনজীবীর সনদ বাতিলের দাবি জানান।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীন বলেন, অভিযোগ তারা পেয়েছেন। যেহেতু একই বিষয়ে থানায়ও অভিযোগ দিয়েছেন সে কারণে একটু অপেক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ মূল্যায়ন না করা কিংবা সমিতির এক নেতা ওই দুই আইনজীবীর পক্ষে নেয়ার বিষয়ে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, অপরাধী যেই হোক সমিতি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেই।
এ বিষয়ে আইনজীবী লতিফুর রহমান খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, টাকা নিয়েছি। মামলাও করে দিয়েছি। ওই মক্কেলের ব্যবহার খুবই খারাপ। তারা বাসাই এসেছিল কিন্তু সাক্ষর না করেই নথি নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু নথি দেয়া হয়নি। পরে তার ছেলে এসে খারাপ ব্যবহার করেছে। তাদেরকে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন লতিফুর রহমান।
এদিকে, মক্কেলকে মারপিট ও জখমের অভিযোগ এখন আদালতপাড়ায় চাউর হয়ে গেছে। আইনজীবীরা এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সমিতির শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নেতাদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।