gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
কলাপাড়ায় বরই চাষ করে সফলতার মুখ দেখেন মিজানুর রহমন
প্রকাশ : শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি , ২০২৪, ১২:৪৬:০০ পিএম
এইচ এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী):
GK_2024-01-26_65b348f97a4ed.jpg

বাগানের চারদিকে তাকালে শুধু বরই আর বরই। ছোট গাছ গুলো বরইয়ের ভারে নুইয়ে পড়েছে। আপেলের মতো দেখতে লাল টুকটুকে বড় বড় বরই শোভা পাচ্ছে তার গাছে। গাছ গুলো রোপনের পর নিজেই পরিচর্যা শুরু করেন। সঠিক পরিচর্যায় গাছ গুলো বেড়ে উঠে এ বছর ফল ধরেছে সব গাছ গুলোতে। গাছে গাছে শুধু দুলছে লাল আভা ছড়ানো থোকায় থোকায় কুল। পাকতে শুরু করেছে সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে। বিক্রি ও শুরু করেন তিনি। আকার, স্বাদে ভালো হওয়ায় বাজারে মিজানুর রহমন বাগানের কুলের চাহিদাও খুব বেশী। এখন ১০০ টাকা দরে বাজারে কুল বিক্রি করছেন।
বরইয়ের এ বাগান গড়ে তুলেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিযাখালী ইউনিয়নে মধ্য টিয়াখালীর গ্রামের মিজানুর রহমন। শীতকালীন ফলের মধ্যে বরই অতি পরিচিত ফল। প্রাচীনকাল থেকে এ ফলটির সঙ্গে সবাই কম বেশি পরিচিতি। শীতকালীন অন্যান্য ফলের তুলনায় বরই অত্যন্ত সুস্বাদু। বিভিন্ন হাট-বাজারে সবত্রই পাওয়া যায় এ ফলটি। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে ও ফলন ভালো হওয়ায় বরইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এক সময় দেশি টক জাতীয় বরই পাওয়া গেলেও, কৃষি গবেষণার ফলে আমাদের দেশেই বিভিন্ন ধরনের বরইয়ের উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। এখন দেশেই বিভিন্ন প্রজাতির বরই পাওয়া যায়। অবশ্য বরইকে অনেকে কুল নামেও চেনে-জানে। দেশি টক জাতীয় বরইয়ের পাশাপাশি রয়েছে নারকেল বরই, আপেল কুল, বাউকুল ও থাইকুল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। বরই চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। বরই এমন একটি ফল, যা শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ফল এটি। তবে টক বরইয়ের চাহিদা রয়েছে এক শ্রেণির মানুষের কাছে। এ মুখরোচক ফলটি শীতকালে আমাদের দেশের প্রায় সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। শখের বশেও অনেকে বাড়ির ছাদে বরইয়ের চাষ করছেন। খেতে সুস্বাদুর পাশাপাশি পুষ্টিগুণে ভরা। বরইয়ে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামসহ নানা উপাদান; যা মানবদেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বরই চাষ করেই এখন মিজানুর রহমন একজন স্বাবলম্বী কৃষক।
বরই চাষী মিজানুর রহমন টিযাখালী ইউনিয়নে মধ্য টিয়াখালীর গ্রামের সাবেক মেম্বার ফকরুদ্দিন ছেলে। তার সংসারে স্ত্রী ও এক ছেলে/ মেয়ে রয়েছে। ছেলে সিয়ামকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীতে পড়াশুনা করে ও একটি মেয়ে রয়েছে ছোট।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মিজানুর রহমানের বাগান জুড়ে কুল গাছে ভরা। লাল সাদা আর মেরুন রঙ্গের বাহারি ফলে ভরে গেছে বাগান। কর্মচারীরা ঝুড়ি ভর্তি করে বিক্রির জন্য গাছ থেকে ছিরছেন পাকা কুল। পাখির ছোবল থেকে কুল রক্ষার জন্য পুরো বাগান জুড়ে টানিয়ে দেয়া হয়েছে জাল। চলতি মৌসুম শুরু থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই বড়ই কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন বাগান থেকে কম বেশি কুল কিনে নেন ক্রেতারা। এদিকে বাগানটিতে বরই কিনতে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ক্রেতারা। পরে ফেসবুকে জুড়ে দেওয়া ছবি দেখে অন্যরা অনুপ্রণিত হয়ে ছুটে যাচ্ছেন বরই কিনতে বাগানে। এতে কৃষক মিজানুর রহমন মুখে হাসি ফুটে উঠে এবং ক্রেতাদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধু হয়ে যান।
গত ৩ এপ্রিল ২০২৩ সালে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৩৫০টি বরই চারা ক্রয় করে ও কৃষি অফিস থেকে ৭৫টি চারা সংগ্রহ করে। ২৪০০০টাকার বরই চারা কিনে নিয়ে পৈতৃক ১০০শতাংশ জমি বরই চাষ শুরু করেন মিজানুর রহমন। সেই কুল বিক্রি করেই তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন করেন। চলতি মৌসুমে বরই বিক্রি করে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন। বরই গাছ ৭-৯ ফুট লম্বা। সেখানে বল সুন্দারী কুল জাতের বরই আবাদ করেন। এক বছরে মিজানুর রহমন পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। ছেলের এ সফলতায় গর্ব বোধ করছেন বাবা ফকর উদ্দিন ।
এই বাগানে ৪২৫টি মতো বরই চারা রয়েছে। মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই তাদের বাগানের প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে বরই ধরেছে। প্রচুর পরিমাণে বরই ধরায় পুরো বাগানটি নেট দিয়ে ঘেরা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বাগানের গাছ থেকে বরই তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। মচমচে স্বাদে সুমিষ্টি হওয়ার কারণে তাদের এক মন বরই চার হাজার টাকা দরে বিশ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এই বাগনের উদ্যোক্তারা আশা করেছে চলতি মৌসুমে এখানে থেকে আরো ৩৫-৪০ মন বরই বিক্রি করবেন। যা থেকে তারা প্রথম বছরেই বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করার সম্ভাবনা দেখছেন। একই সঙ্গে তাদের বাগান থেকে বারোমাসি থাই পেয়ারা আম ও বিক্রি করবেন। বর্তমানে তার বাগান ২০৫ শতাংশ জমি রয়েছে।
বরই চাষী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম আমি বরই চাষ করে বুঝতে পারলাম ও অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিভাবে আগামী বছর বর গাছ পরিচর্যা করতে হবে। কৃষি অফিস থেকে আমাকে অনেক সুপরামর্শ দিয়েছে। আগামি বছর আরো ভাল ফলন ফলাতে পারবো বলে আশা করি। ৭ মাসের মাথায় বরই গাছ গুলোতে মাশআল্লাহ ভালো ফলন দিয়েছে। গাছ থেকে পাকা বরই সংগ্রহ করেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। অনেকেই বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যান। এ বছর আবহাওয়া শেষের দিকে খারাপ থাকায় ফুল ঝড়ে পাড়েছে ও পাখির আক্রমনে অনেক বর নষ্ট হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বশির বলেন, মিজানুর যে বরই চাষ করে সফল হবে তা কেউই কখনো কল্পনা করেনি। মিজানুর রহমানের বরই বাগানে ভালোই উৎপাদন হয়েছে। আশা করি এ বছরই তিনি তার খরচ উঠাতে পারবেন।
বরই কিনতে যাওয়া চাকরিজীবী কামরুজ্জামান কায়েস বলেন, এ ধরণের বরই বাগান কলাপাড়া আর কোথাও নজরে পড়েনি। বরইগুলোও ক্ষেতে দারুণ মিষ্টি। মিজানুর রহমানের বরই বাগানে সফলতা দেখছেন। তার মতো অন্যরাও যদি ঝুঁকি নেয় উপকূলীয় এ অঞ্চল কাজ করে কৃষিক্ষেত্রে আরও সফলতায় এগিয়ে যাবে।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, মিজানুর একজন সফল চাষি। তাকে কৃষি অফিস ও (এসএসিপি) সংস্থা সকল সহযোগীতা করে যাচ্ছে। 'আমাদের মাঠ পর্যায়ে জোবায়েদা আক্তার সহকারী কৃষি অফিসার আছেন তারা কুল চাষে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

আরও খবর

🔝