gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
পাকিস্তানের আগামী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ফজলুর রেহমান?
প্রকাশ : সোমবার, ৪ ডিসেম্বর , ২০২৩, ০৮:৩৭:০০ পিএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2023-12-04_656de461d1458.jpg

পাকিস্তানে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এতে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) অথবা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) যে দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাক না কেন, দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমান। রোববার (৩ ডিসেম্বর) এ দাবি করেছেন জেইউআই-এফের এক মুখপাত্র। খবর জিও নিউজের।
পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৮ সেপ্টেম্বর। এরপরও পাকিস্তানি সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীনে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রাদেশিক এবং জাতীয় পরিষদের অনুপস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট তার পদে বহাল থাকতে পারেন। পাকিস্তানে এ বছরের জানুয়ারিতে প্রাদেশিক এবং গত আগস্টে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সংবিধানের ৪১ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পার্লামেন্ট, সিনেট এবং চারটি প্রাদেশিক পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আরিফ আলভি পাকিস্তানের চতুর্থ রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করেছেন।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেইউআই-এফ নেতা হাফিজ হামদুল্লাহ বলেছেন, মাওলানা ফজলুর রেহমানকে যদি বহুদলীয় জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) প্রধান করা যায়, তবে তাকে দেশটির প্রেসিডেন্টও করা যেতে পারে।
কে এই ফজলুর রেহমান : ২০১৮ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে পাঁচটি আসনে লড়ে সব ক’টিতেই জেতেন ইমরান খান, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীও হন। ওই নির্বাচনে তিনটি আসনে লড়ে সব ক’টিতেই হেরে যান মাওলানা ফজলুর রেহমান। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন পাকিস্তানের এই ঝানু রাজনীতিবিদ।
ইমরানবিরোধী প্রচারণা : ২০১৯ সাল থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে নিরলস প্রচারণা চালিয়ে গেছেন পিডিএম প্রধান। ওই বছরের শেষের দিকে তার সংগঠন জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজলুর (জেইউআই-এফ) ইসলামাবাদ অবরোধ করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পদত্যাগ ও নতুন করে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়। ফজলুর রেহমানের ওই আন্দোলনে পরে সমর্থন দেয় পিএমএল-এন এবং পিডিপি।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন : ২০১৯ সালে ইমরান খানের পক্ষে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিরোধ কঠিন হয়ে পড়লে ফজলুর রেহমান তার সমর্থকদের নিয়ে ইসলামাবাদের ডি-চক বা ডেমোক্র্যাসি চক চত্বরে বিশাল সমাবেশের ডাক দেন। ‘আজাদি মার্চ’ নামে পরিচিত তার ওই আন্দোলনকে নওয়াজ শরীফ সরকারের বিরুদ্ধে ইমরান খানের ২০১৪ সালের দুর্নীতিবিরোধী ধর্নার সঙ্গে তুলনা করা হয়।
ইমরান খানের আন্দোলনে নওয়াজ সরকারের পতন না হলেও জনগণের মনে বিশ্বাস জন্মেছিল, ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়া সম্ভব। এর চার বছর পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ইমরান। আর ফজলুর রেহমানের আজাদি মার্চ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পিডিএম গঠনের ভিত্তি রচনা করেছিল। ওই সময় পাকিস্তানের রাজনীতিতে পরিচিত নাম নওয়াজ শরীফ, প্রয়াত বেনজির ভুট্টো এবং আসিফ আলী জারদারির অনুপস্থিতিতে পার্লামেন্টে দলের নগণ্য অবস্থান সত্ত্বেও ইমরান খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠেন ফজলুর রেহমান।
এ থেকেই স্পষ্ট, ইমরান খান কেন তার চেয়ে বয়সে আট মাসের ছোট, কিন্তু রাজনীতিতে বেশি অভিজ্ঞ ফজলুর রেহমানকে তার সরকারের জন্য হুমকি বলে মেনে নিয়েছিলেন। একসময় তেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় ৬৮ বছর বয়সী এ নেতাকে বহুবার ‘ডিজেল’ নামে উপহাস করেছেন ইমরান খান।
ইমরানের শত্রু : ১৯৮০ সালে ইমরান খান যখন তার প্রথম টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলার নয় বছর পূরণ করেন, সেই সময় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন ফজলুর রেহমান। ১৯৯২ সালে ইমরান যখন পাকিস্তানের হয়ে একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতেন, তখন প্রথমবার পাকিস্তান পার্লামেন্টের সদস্য হন রেহমান। ১৯৯৬ সালে যখন ইমরান খানের নিজস্ব রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে, ফজলুর রেহমান তখন বেনজির ভুট্টো সরকারের অংশ এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
ফজলুর রেহমানের বাবা ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের নতুন সংবিধানের অন্যতম স্বাক্ষরকারী হলেও নির্বাচনের মাঠে খুব একটা সাফল্য পাননি। কিন্তু তার ছেলে ঠিকই দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান গড়ে নিয়েছেন। আগামী দিনে তিনি আরও বড় কোনো ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন কি না তা সময়ই বলে দেবে।

আরও খবর

🔝