gramerkagoj
বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১১ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন
প্রকাশ : রবিবার, ৮ অক্টোবর , ২০২৩, ১২:৩৪:০০ পিএম
কাগজ ডেস্ক ::
GK_2023-10-08_65224940b082f.jpg

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন স্থাপিত রেললাইন এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন আগেই নির্মিত হয়েছে। ১৫ থেকে ২০ অক্টোবর এ রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু করা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবর এই লাইনের উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে কক্সবাজারবাসীর বহুল আলোচিত স্বপ্ন।
আইকনিক স্টেশন ভবনের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে আমরা খুবই আনন্দিত। আমাদের কাজগুলো এখন একদম শেষ পর্যায়ে। এখন সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ যেমন রঙ করা, বৃক্ষরোপণ, ঝিনুকের ফোয়ারায় রঙ করা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থান নিশ্চিতকরণের কাজগুলো করছি।’
দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মুফিজুর রহমান জানান, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে শেষ হয়েছে ৯টি স্টেশন নির্মাণকাজ। এর মধ্যে রয়েছে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। এসব স্টেশনে থাকছে কম্পিউটারবেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ, আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা। সামগ্রিক প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। দুই পর্যায়ে এই প্রকল্প শেষ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দেশের একমাত্র বিশ্বমানের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনটি এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। যেটি পরিপূর্ণ একটি কমপ্লেক্স। রয়েছে তারকা মানের হোটেল, লকার, শপিং মল, রেস্তোরাঁসহ বিশ্বমানের সব সুযোগসুবিধা। শ্রমিকদের ঝিনুকের ফোয়ারায় রঙ লাগানো, বৃক্ষরোপণ, চারপাশে সৌন্দর্যবর্ধন ও গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান চিহ্নিতকরণ করতে দেখা গেছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন পর্যবেক্ষণে এসে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প সারা দেশের জনগণের স্বপ্নের প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। ১৫ থেকে ২০ অক্টোবর দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু করা হবে। আশা করছি, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।’
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হবে না। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ব্যাপারে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু নির্মাণেও কোরিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির জন্য খসড়া পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, অক্টোবরের মাঝামাঝি কিংবা খুব অল্প সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হবে। এরপরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাটের পুরোনো যে সেতুটি রয়েছে তা দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর আগেই সংস্কার করে মজবুত করার কাজ চলছে। অক্টোবরের মধ্যে সেতুটির সংস্কারকাজও সম্পন্ন হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন হওয়ার পরের দিন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে না। আমরা হয়তো কিছুদিন সময় নেব।
এরই মধ্যে হয়তো কালুরঘাটের পুরোনো সেতুতে ট্রেন সীমাবদ্ধ গতিতে চলবে। দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন যে রেললাইন এটাতে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন লোকোমোটিভ ট্রেন যাতে চলাচল করতে পারে সে উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত কালুরঘাটে নতুন সেতু না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত পুরোনো সেতু অংশে শুধু সীমাবদ্ধ গতিতে ট্রেন চলবে। কিন্তু সেতুর পর থেকে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে।
জনবল নিয়োগের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছিলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে রেলস্টেশনসহ সব স্তরে ১ হাজার ২০০ জনবল প্রয়োজন। এই জনবলের জন্য এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে অনুমোদনের জন্য। সেটাও দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন হয়ে গেলে জনবলও পেয়ে যাব।’
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া স্টেশনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি ট্রেন। যেটিতে রয়েছে ৬টি বগি ও ২ হাজার ২০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন। কোরিয়া থেকে আনা এসব বগির একেকটিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। বর্তমানে নগরের ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইনও পুরোদমে সংস্কার করা হচ্ছে।

আরও খবর

🔝