gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
দক্ষিণ এশিয়ায় সম্পর্কোন্নয়ন: শেখ হাসিনার প্রশংসা
প্রকাশ : বুধবার, ২৪ মার্চ , ২০২১, ০৩:২১:০৬ পিএম
ঢাকা অফিস::
1616579558.jpg
‘বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্র থেকে ২৫তম অর্থনীতির দেশ হওয়ার পথে আছে বাংলাদেশ। দেশটি আজ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বরং উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য প্রেরণাদায়ী উদাহরণ। এর নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় ‘ইন্দো-পাক অ্যান্ড ইন্দো-বাংলাদেশ: আ টেল অব টু রিলেশনশিপস’ শিরোনামে উপমহাদেশের আর্থসামাজিক রাজনীতির বিশ্লেষণমূলক এক কলামে ওপরের কথাগুলো লিখেছেন বিশ্বখ্যাত গবেষক সি রাজা মোহন। তিনি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক। এই কলামে লেখক বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার আন্তসম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কোন দেশের অবস্থান কোন পর্যায়ে তা তুলে ধরেছেন। পুরো লেখায় নির্মোহ বিশ্লেষণে সি রাজা মোহন এই অঞ্চলের উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এই সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে উল্লেখ করেছেন।কলামের শুরুতে তিনি লেখেন, উপমহাদেশের আধুনিক ইতিহাসের এক স্মরণীয় মুহূর্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সপ্তাহে ঢাকা সফর করবেন। এখানে উদযাপনের পাশাপাশি পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতে রয়েছে এর প্রতিফলনও।বাংলাদেশের অতুলনীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সাফল্য শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য দারুণ প্রেরণাদায়ী উদাহরণ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্র। আজ দেশটি বিশ্বের ২৫তম অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার পথে।১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের বিবেচনায় দেশভাগের যথাক্রমে ৭৫ বছর ও ৫০ বছর পর সময় এসেছে মূল্যায়নের যে এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো কেন কাছাকাছি আসতে ব্যর্থ হয়েছে। পূর্ব প্রান্তে ঢাকা ও দিল্লি দেশভাগের বিয়োগান্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতার পথনির্দেশনা ঠিক করেছে। দিল্লির সঙ্গে ঢাকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে গত এক দশকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। ভারতও এর প্রতিদানে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে।তবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ইতিবাচক অগ্রগতি এখনো অধরাই রয়ে গেছে। তবে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে গত মাসের শেষের দিকে যুদ্ধবিরতির সমঝোতা নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আহমেদ জাভেদ বাজওয়া গত সপ্তাহে ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি অতীতকে ‘কবর’ দিয়ে সমানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।তবে অতীতকে ‘কবর’ দেয়া সহজ কথা নয়। জেনারেল বাজওয়ার আহ্বান ভারতে যথেষ্ট সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে করতে ভারত বেশ ক্লান্ত। পাকিস্তানের চিত্রও এর চেয়ে বিশেষ একটা আলাদা নয়। জেনারেল বাজওয়ার প্রস্তাব পকিস্তানেও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অতীতকে ‘কবর’ দেয়ার ইস্যুতে পাকিস্তানের কাছেও আছে অভিযোগনামা। দেশটিরও আছে নিজস্ব পথচলার দিকনির্দেশনা। এর সঙ্গে রয়েছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিভক্তির সময় ভারতের ভূমিকার প্রসঙ্গটিও।ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সবকিছু ‘মিটমাট’ করে ফেলা যথেষ্ট কঠিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের কোনো নেতা উপস্থিত থাকছেন না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিচ্ছেদ ও বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ বিষয়ে এ সপ্তাহে লাহোরে এক আন্তর্জাতিক সেমিনার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সরকারের চাপে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করতে হয়েছে আয়োজকদের। লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল।অন্যদিকে দ্বিতীয় পার্টিশন (দেশভাগের দ্বিতীয় অংশ) উদযাপনে ব্যস্ত ভারত। প্রথম পার্টিশন থেকে দ্বিতীয় পার্টিশনে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে এর প্রভাব রয়েছে। এগুলো হলো সংখ্যালঘুদের অধিকার, আন্তসীমান্ত যোগাযোগ এবং নদীর পানিবণ্টন ইস্যু। এগুলো দুর্বোধ্য কোনো বিষয় না, বরং অভ্যন্তরীণ তিক্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিয়াকলাপ, যার প্রভাব এবার দেখা যাবে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে।এদিকে বাংলাদেশও ১৯৭১ সালের পটভূমিতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাস বিশ্লেষণ, মতাদর্শের প্রকৃতিগত অবস্থান নির্ণয় এবং ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা ইস্যুতে দেশটিতে রয়েছে গভীর মতপার্থক্য। সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বিবেচনায় নিতে হবে দিল্লিকে।গত এক দশকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কূটনৈতিক তৎপরতা যথেষ্ট বাড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ভারত সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তর প্রদেশের রাজ্য সরকারের কারণে। এল কে আদভানির বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে যে পরিকল্পনায় বাদ সেধেছিল, সেই একই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংসদে কাজ করেছে মোদির বিজেপি। বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রবিরোধ নিরসনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের কর্মকা-ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি দেখা গিয়েছে বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি, আন্তসীমান্ত সংযোগ বৃদ্ধি, সন্ত্রাস নিরসনে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক সম্পর্কোন্নয়নে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের সোনালি ক্ষণে নরেন্দ্র মোদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা সেই যুগসন্ধিক্ষণের ঊষালগ্নে অবস্থান করছি। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ উপযোগিতা পাওয়ার জন্য আমাদের এখনো আরো অনেক কিছু করতে হবে।পূর্ব দিকে সম্পর্ক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভারতের পশ্চিম দিক থেকে ইতিবাচক ফলাফল আহরণে নেয়ার মতো কোনো শিক্ষা কি আছে? প্রথমেই বলতে হবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নীতি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, যা ঢাকা ও দিল্লির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে গভীর ভূমিকা পালন করেছে। বিপরীতক্রমে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা নেই বললেই চলে। পাকিস্তানের মূলধারার বেসামরিক নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী। বাস্তবতা হলো, এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ মনোভাব ঠিক করতে হবে।এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, পাকিস্তানের জেনারেল পারভেজ মোশাররফ কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। তবে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক আহমেদ কায়ানী কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠার ইস্যু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। আর সে কারণেই দিল্লির অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন, জেনারেল বাজওয়ার সঙ্গে সম্পাদিত কোনো সমঝোতা হয়তো তার উত্তরসূরি ভবিষ্যতে মেনে না-ও নিতে পারেন।দ্বিতীয় উদ্বেগ পারস্পরিক নিরাপত্তা। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে গভীর সমঝোতার সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্কের অনেক জটিল অধ্যায়ের সমাধানে এটি বেশ কার্যকর হয়েছে।পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে সমঝোতায় আনতে সেনাবাহিনী আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে বেছে নিয়েছে। একসময় হয়তো এর মূল্য ছিল। অতীতে এটি পাকিস্তানের জন্য একটি কার্যকর কৌশল হলেও এখন সন্ত্রাসবাদের কারণে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে চাপের সম্মুখীন হতে হবে। কপালে তাক করে রাখা বন্দুকের ভয়ে যেকোনো ধরনের সমঝোতায় এখন আর দিল্লি রাজি হবে না।তৃতীয়টি হলো, জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থে অরাজনৈতিক বিষয়াদি। নিজস্ব স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ঢাকা ও দিল্লি বাণিজ্য, ট্রানজিট এবং কানেকটিভিটির মতো ইস্যুগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়েছে।অন্যদিকে পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক সম্পর্কের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে কাশ্মীর ইস্যু। এ বিষয় এখনো পরিষ্কার না যে পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুকে পাশে ঠেলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে এগিয়ে নেবে।জেনারেল বাজওয়ার বক্তব্যে ভূ-রাজনীতির পরিবর্তে ভূ-অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন- ঠিক যে কাজটি এক দশক ধরে করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্য, দক্ষিণ এশিয়াকে পূর্ব দিকে নিয়ে আসার জন্য এবং ঢাকাকে বিশ্ব পরিম-লে দাঁড় করানোর জন্য। কিন্তু জেনারেল বাজওয়া কি পারবেন? যদি তিনি পারেন, তাহলে দিল্লি পরম আগ্রহের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

আরও খবর

🔝