
যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীন তিন হাজার একশ স্কুল-কলেজ প্রধানকে সার্বক্ষণিক তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে। কেবল উদ্যোগই নেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে বাস্তবায়নও শুরু করা হয়েছে। সরকারিভাবে মোবাইল ফোনের সিম সরবরাহ করে তাদেরকে সার্বক্ষণিক নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে। বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমে সরকারিভাবে সরবরাহকৃত মোবাইল ফোন সিম ইতোমধ্যে সংগ্রহও করেছেন। শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই এই পদক্ষেপ।
শিক্ষাবোর্ডের স্কুল ও কলেজ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন না। এমনকি বোর্ড থেকে জরুরি প্রয়োজনে ফোন করা হলেও অনেকেই তা রিসিভ করেন না। আবার অনেক সময় মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে। এসবের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান মাঝেমধ্যে অন্য সিম ব্যবহার করে থাকেন। এ কারণে বোর্ডের কাছে থাকা মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে, শিক্ষাবোর্ডের কাছে মোবাইল ফোন নম্বর থাকার পরও জরুরি কাজ মেটানো যাচ্ছে না। আবার, কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে ফাইল ঘেঁটে ইআইআইএন নম্বর বের করতে হয়। তারপর ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা যায়। এসব অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে যশোর বোর্ডের ২৫শ’ ৩৭ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫শ’ ৮৬ টি কলেজের প্রধানকে মোবাইল ফোনের সিম দেয়া হচ্ছে। গ্রামীণ ফোন এই সিম সরবরাহ করছে বিনামূল্যে। এই সিমের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন নম্বরের সাথে মিল রেখে নম্বর দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের ছয়টি সংখ্যার ইআইআইএন নম্বরই হচ্ছে মোবাইল ফোন নম্বর। এই ফোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিবর্তন হলেও মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত থাকবে। কেবল তাই না, এই মোবাইল ফোন নম্বরটি সার্বক্ষণিক খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। যাতে শিক্ষাবোর্ড যেকোনো সময় যোগাযোগ করতে পারে। একইসাথে ওই মোবাইল ফোন নম্বর দেখে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ফাইলের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। যাতে কর্মকর্তাদের কাজ অনেকাংশে সহজ হবে বলে তারা মনে করছেন।
সরকারিভাবে সরবরাহকৃত এই মোবাইল ফোনের সিম সংগ্রহের জন্যে যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই সিম সংগ্রহ করার শেষ দিন ছিল। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিম সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদেরকে সর্বশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ২৯ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বরের মধ্যে যশোর, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের গ্রামীণ ফোনের যশোর সেন্টার থেকে এবং খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের গ্রামীণ ফোন খুলনা সেন্টার থেকে সিম সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান এই সময়ের মধ্যে যদি সিম সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন তাহলে তার দায় দায়িত্ব তার উপর বর্তাবে। একইসাথে উদ্ভুত সমস্যার কোনো দায় বোর্ডের উপর বর্তাবে না-নির্দেশনাপত্রে এটি উল্লেখ করা হয়েছে। যশোর শিক্ষাবোর্ডের এ সংক্রান্ত নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী।
এ বিষয়ে কলেজ পরিদর্শকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনেকেই তাদের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলে ঠিকমতো রিসিভ করেন না। অনেক সময় বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এসব কারণে সরকারিভাবে তাদের সিম সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সিম সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে বলা হয়েছে। যাতে করে জরুরি প্রয়োজনে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বেগ পেতে না হয়। ইআইআইএন নম্বরের সাথে মিল রেখে মোবাইল ফোন নম্বর হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফাইল খুঁজে পাওয়াও সহজ হবে।