
ভারতীয় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ভূস্বর্গ খ্যাত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করায় অঞ্চলটিতে ইতোমধ্যে এক থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যা নিয়ে গোটা দেশে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে এবার ইস্যুটি নিয়ে পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি চীন। যদিও বেইজিংয়ের এই মন্তব্যের প্রতিবাদে এরই মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাবিশ কুমার গণমাধ্যম ‘এনডিটিভি’কে বলেছেন, ‘জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে দিল্লি যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা সম্পূর্ণই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান এবং ভারত উভয় দেশই আলোচনার মাধ্যমে চলমান কাশ্মীর সংকটের সমাধান করবে। এ নিয়ে চীনের কোনো অনধিকার চর্চা করার কারণ নেই।’
সম্প্রতি ইসলামাবাদে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও জিং বলেছিলেন, ‘কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে আগের মতোই আছে চীন। বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ হলেও সীমান্ত এবং ঐতিহাসিক কারণে এর সঙ্গে পাকিস্তানও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’ মুলর তার সেই মন্তব্যের জবাবেই এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
আগামী ১১ই অক্টোবর ভারত সফরে আসার কথা ছিল চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের কথা রয়েছে তার। এমন এক সময়ে কাশ্মীর ইস্যুতে চীনা রাষ্ট্রদূতের এই মন্তব্য নয়াদিল্লির সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে বলে দাবি বিশ্লেষকদের।
গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ইসলামাবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান কাশ্মীর সংকট নিয়ে কথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও জিং। তার ভাষায়, ‘কাশ্মীরিদের মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ন্যায় বিচারের দাবিতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবিলম্বে কাশ্মীর সমস্যার যৌক্তিক সমাধান হওয়া উচিত।’
চীনা রাষ্ট্রদূতের মতে, ‘কাশ্মীর নিয়ে অতীত থেকেই সমস্যা রয়েছে। তাই ইস্যুটি নিয়ে একটি আঞ্চলিক শান্তির লক্ষ্যে পাকিস্তানের পাশে রয়েছে চীন।’
এর আগে গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছিল ক্ষমতাসীন মোদী সরকার। যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে বিতর্কিত লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর সৃষ্টির প্রস্তাবেও সমর্থন জানানো হয়।
এসবের মধ্যেই চলমান কাশ্মীর ইস্যুতে পাক-ভারত মধ্যকার সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে একে একে ভারত সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য, যোগাযোগসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। যদিও এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ভারত পাশে পেয়েছে রাশিয়াকে এবং পাক সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ ইরান ও এশিয়ার পরাশক্তি চীন।